ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
কৃষি উদ্যোগ
অনুন্নত জাতের আম গাছকে উন্নত জাতে পরিবর্তনের পদ্ধতি

বর্তমানে বাংলাদেশে ৭০টি ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হচ্ছে। এর মধ্যে আম স্বাদে ও গন্ধে খুবই আকর্ষণীয় ফল। ফলের গুণগতমান ও বহুবিধ ব্যবহারের কারণে প্রায় সব মানুষের কাছে এটি সমানভাবে সমাদৃত। ভারতীয় উপমহাদেশে এই জন্য আমকে ফলের রাজা বলা হয়। ভাল বা উন্নতজাতের আমের চাহিদা দেশব্যাপী। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল জেলাতেই আমের চাষাবাদ হচ্ছে। কিন্তু ভাল ও মানসম্পন্ন আম সকল জেলাতে উৎপাদন হয় না। কারণ হিসেবে দেখা যায়, মাটি ও আবহাওয়াগত অবস্থা, আমের জাত ও বাগান ব্যবস্থাপনা উলেস্নখযোগ্য। আমের রাজধানী চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, দিনাজপুর, মেহেরপুর ও ঠাকুরগাঁ জেলাতে ভাল জাতের আম উৎপাদন হয়। অন্যান্য জেলাগুলোতে বেশিরভাগ আম গাছ বীজ থেকে হওয়া বা গুটি প্রকৃতির। ফলে বীজের গাছ হতে ভাল জাতের আম পাওয়া সম্ভব নয়, যার জন্য প্রতি বছর বিভিন্ন বয়সের আম গাছ চাষিরা কেটে ফেলেন। কিন্তু অতি সহজেই টপ ওয়ারকিং এর মাধ্যমে অনুন্নত জাতকে উন্নত জাতে পরিবর্তন করা যায়। এছাড়াও ভাল জাতের আমের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৪০ ভাগ আম গাছই গুটি প্রকৃতির। যদি এই গুটি গাছগুলোকে এই পদ্ধতির মাধ্যমে উন্নত জাতে পরিবর্তন করা সম্ভব হয় তাহলে খুব অল্প সময়ে দেশে আমের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।   এই পদ্ধতিতে জাত পরিবর্তনের জন্য প্রথমে অনুন্নত জাতের গাছটির উপরের অংশ কর্তন করা হবে। বছরের সব সময় এই কর্তনের কাজটি করলে সুফল পাওয়া যাবে না। গবেষণায় দেখো গেছে, বর্তমান সময় এবং ফেব্রুয়ারি মাসে কর্তনের কাজটি করলে ভাল হয়। গাছ কর্তনের পরে গাছে সার ও সেচ ব্যবস্থাপনা করতে হবে। সাধারণত দেখা যায়, ডাল কর্তনের ৩০ থেকে ৪৫ দিন পর নতুন শাখা বের হয়। তবে মাটির অবস্থাভেদে এই সময় কম বেশি হতে পারে। প্রথমে দেখা যায়, কর্তিত অংশ হতে অসংখ্য নতুন কুশি বের হয়। সুস্থ সবল ও রোগমুক্ত শাখাগুলো রেখে বাকিগুলো ভেঙে ফেলতে হবে। গাছের বয়স অনুযায়ী ৫০ থেকে ১০০টি শাখা রাখতে হবে। এই সময় নতুন কুশিতে এ্যানথ্র্যাকনোজ রোগের আক্রমণ দেখা দিতে পারে। এই রোগের আক্রমণ দেখা দিলে ছত্রাকনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ২/৩ বার ১৫ দিন পর পর সপ্রে করতে হবে। পাতা কাটা উইভিল বা থ্রিপসের আক্রমণ হলে সুমিথিয়ন ৫০ ইসি/ডায়াজিনন ৫০ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ২ মিলি হারে সপ্রে করতে হবে। ছাঁটাইকৃত ডালে যে কুশি বের হবে সেগুলো মে-জুলাই মাস পর্যন্ত কলম করা যাবে। ক্লেফ্ট এবং ভিনিয়ার এই দুই পদ্ধতিতে কলম করা যায়। তবে কলম করার সময় ভিনিয়ার পদ্ধতিতে কলম করা উত্তম। অন্য পদ্ধতিতে সফলতার হার কম হবে। প্রত্যেকটি ডালে ভিন্ন জাত দ্বারা কলম করা সম্ভব তবে খুব বেশি জাতের কলম না করাই ভাল। কলম করার পর মূল গাছের শাখা-প্রশাখা বের হলে তা ভেঙে ফেলতে হবে। নতুন জাতে পরিবর্তিত গাছে তৃতীয় বছর হতে আম উৎপাদন শুরু হয় এবং চতুর্থ বছর হতে ভাল ফলন দিতে শুরু করে। গাছের বয়স ১০ থেকে ৪৫ বছর হলে পদ্ধতিটি প্রয়োগ করলে ভাল ফলাফল পাওয়া যাবে। তবে গাছের বয়স কম হলে ডগা না কেঁটে সরাসরি কলম বাঁধা যায়। ফলে অতি অল্প সময়ে বর্ধিত জনসংখ্যার জন্য অতিরিক্ত আমের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।  মো: শরফ উদ্দিন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা  আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, চাঁপাই নবাবগঞ্জ