ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
কৃষি উদ্যোগ
ব্যাগ গার্ডেনিং

ধরুন, আপনি এমন এক এলাকায় থাকেন, যেখানে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই আছে। প্রতিবছর বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় কিংবা এমনও হতে পারে শাকসবজি করার মতো আপনার কোনো জমি-জিরেতও নেই, অথচ নিজের ফলানো শাকসবজি খাওয়ারও ইচ্ছা মনে। তাহলে কি আপনি হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন? মোটেই না। পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়নকেন্দ্র নামের একটি বেসরকারি সংস্থা উদ্ভাবন করেছে অল্প জায়গায় শাকসবজি চাষের পদ্ধতি। বিশেষ এ কৌশলের নাম ব্যাগে বহু স্তরে সবজি চাষ বা ব্যাগ গার্ডেনিং। এ ব্যবস্থায় বড় ব্যাগের ভেতর মাটি দিয়ে শাকসবজি চাষ করা হয়। এর প্রধান সুবিধা হচ্ছে প্রয়োজনমতো আপনি ব্যাগটি সরিয়ে নিতে পারবেন। এ ব্যবস্থায় সারা বছর কয়েকবার শাকসবজিও তোলা যাবে। পদ্ধতিটি ছোটখাটো পরিবারের জন্য একেবারে লাগসই। তবে খেতের সবজির মতো বড় আকারে ফলন এখানে পাওয়া যাবে না।

সবজী চাষ একটি ঋতুভিত্তিক বা মৌসুম নির্ভর কর্মকান্ড তবে উন্নত জাতের সবজি যা কম বেশী সারা বছর উৎপাদন করা যায়। সবজি চাষ সম্পূর্নভাবে একটি পারিবারিক শ্রম নির্ভর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। এ কর্মকান্ড সংসারের অন্যান্য কাজের ফাঁকে সময় দেয়ার সুযোগ রয়েছে।

পুষ্টি সমস্যা একটি বড় সমস্যা। এই সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে, খাবার মেনুতে বৈচিত্র আনার জন্য ব্যাগ গার্ডেনিং গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে। অনেক সময় বাজারে সবজীর দাম সাধারন মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায় ফলশ্রুতিতে দরিদ্র এবং অসচ্ছল পরিবারগুলো খাবার মেনু কমিয়ে তাদের বাজেটের সমন্বয় করে থাকে নিজস্ব পরিসরে চাহিদা এবং রুচি অনুযায়ী পুষ্টি সমৃদ্ধ শাক-সবজী উৎপাদন করতে পারলে অর্থ এবং সময় সাশ্রযের পাশাপাশি পুষ্টি সমস্যা ও সমাধান সম্ভব। যেহেতু ব্যাগটি স্থানান্তর যোগ্য সেহেতু চর এবং উপকূলীয় এলাকায় বিশেষ ভূমিকা রাখবে। জনসাধারন যাদের জীবন ও জীবিকা অস্থিতিশীল সেক্ষেত্রে স্থায়ীত্বশীলতা আনয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

উদ্দেশ্য :
১. অল্প জায়গাতে ব্যাগে অধিক শাকসবজী উৎপাদনের মাধ্যমে সময় এবং স্থানের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণ।
২. নু্যনতম ব্যয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সবজী উৎপাদন এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও পারিবারিক পুষ্টি নিশ্চিতকরণ।
৩. নিরাপদ সবজী উৎপাদন উৎসাহিতকরণ।


উপকারিতা:
১. ব্যাগে একক এবং মিশ্রভাবে সবজী চাষ করা সম্ভব
২. ব্যাগ অক্ষত থাকা পর্যন্ত সারা বছর একাধিকবার সবজী চাষ করা সম্ভব
৩. সবজী চাষ এমন একটি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড যেখানে উদ্যোক্তার নিজস্ব প্রচেষ্টাই হল মূল পুঁজি। এ কর্মকান্ডের জন্য যেমন বেশি পুঁজি প্রয়োজন হয়না তেমনি প্রয়োজন হয়না বিশেষ কোন দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা।
৪. কিছু শাকসবজী আছে যার প্রচুর বাজার চাহিদা আছে এবং দ্রুত বর্ধনশীল এবং ভাল বাজার মূল্য ও পাওয়া যায় যেমন: পালংশাক, পুইশাককুমড়াশাক,লাউশাক,লালশাক,ডাটাশাক,কলমীশাক ও ঢেঁড়স ইত্যাদি। সেই সাথে পিঁয়াজ,রসুন,মরিচ ও ধনে পাতা উৎপাদন লাভজনক।
৫. বর্তমানে শাকসবজীর উপকারিতা সম্পর্কে মানুষ অনেক বেশী সচেতন। ধনী গরিব সবাই তাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় শাক সবজীকে স্থান দিয়েছে ফলে বাজারে শাকসবজীর চাহিদা এবং মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
৬. চাহিদা অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজীর প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণ এর ফলে চর ও উপকূলীয় এলাকার কৃষক পরিবার তাদের পরিবারের পুষ্টি চাহিদা নিশ্চিত করতে সক্ষম হবেন।

চাষকৃত শাকসবজী:

১. লালশাক
২. ডাটাশাক
৩. কলমীশাক
৪. লাউ
৫. মিষ্টিকুমড়া
৬. চাল কুমড়া
৭. ঢেড়শ
৮. মরিচ


ব্যাগ ভর্তিকরণ:
১.প্রথমে ব্যাগের নীচে শুকনো পাতা খড় দিতে হবে পানি ধারন ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য ।
২.শুকনো পাতা/ খড় এর উপর জৈব সার মাটির মিশ্রন দিতে হবে।
৩.এরপর একটি পিভিসি পাইপ (৬") ব্যাগের মাঝামাঝি স্থানে স্থাপন করতে হবে এবং ইটের খোয়া দিয়ে পাইপটি পূর্ন করতে হবে। যাতে ব্যাগের মাটিতে পারকোলেশন ভাল হয় এবং মাটি জমাট বেধে না যায়।
৪.এবার ব্যাগের মাঝের স্থান ইটের খোয়া এবং সম্পূর্ন ব্যাগটি সার মিশ্রিত মাটি দ্বারা পূর্ন করতে হবে।
৫.ব্যাগটিকে ৪টি ইটের উপর লম্বভাবে স্থাপন করে দুই পাশে ২টি বাঁশের টুকরা দিয়ে বেধে দিতে হবে।
৬.ব্যাগটিতে বীজ/চারা বপন/ রোপন করার পূর্বে সম্পূর্ন ব্যাগটি পানি দ্বারা ভিজিয়ে দিতে হবে। পানি ধীরে ধীরে ইটের খোয়ার মাঝে ঝাঝরি /মগ দ্বারা ঢালতে হবে যাতে মাটি বাইরে বেরিয়ে না যায়।
৭.ব্যাগ ভিজানো হয়ে গেলে ব্যাগের উপরিভাগে শাকসবজীর বীজ/ চারা রোপন করতে হবে এবং ব্যাগের চারদিকে ৩/৪ টি স্তরে চারা লাগানোর জন্য খুব সাবধানে ফুটো করতে হবে বেশী বড় ফুটো হলে পানি দেয়ার সময় মাটি বেরিয়ে যেতে পারে।
৮.ব্যাগের চারপাশে বীজ না দিয়ে চারা লাগানো ভাল বীজ ও ব্যবহার করা যায়।

এ পদ্ধতির চাষাবাদ একেবারেই যে আনকোরা তা নয়। আফ্রিকা মহাদেশের কেনিয়া ও উগান্ডার বস্তি এলাকায় ফ্রান্সভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা ‘সলিডারিটিস’ বেশ কিছুদিন ধরে সফলতার সঙ্গে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করে আসছে এবং তাতে সফলতাও এসেছে।


সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো