ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
মৎস্য চাষ
ববরগুনায় বাণিজ্যকভাবে কাঁকড়া চাষ

 

বরগুনা জেলার মৎস্য চাষীরা বাণিজ্যিকভাবে কাঁকড়া চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। এ অঞ্চলের মানুষের কাছে কাঁকড়ার চাষ নতুন হলেও গত কয়েক বছরে তা প্রসার লাভ করছে। জেলার প্রায় এক হাজার কাঁকড়া ঘেরে কয়েক হাজার মৎস্য চাষীর জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। অনুকূল পরিবেশের কারণে দিনদিন কাঁকড়া চাষ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট চাষী ও মৎস্য দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছে। বরগুনা জেলার আমতলী, পাথরঘাটা, তালতলী উপজেলায় বেশিরভাগ কাঁকড়া ঘের গড়ে উঠলেও বামনা, বেতাগী ও বরগুনা সদরের মৎস্য চাষীরাও আগ্রহভরে কাঁকড়া চাষ শুরু করেছেন।


 

আমতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া বাস স্ট্যান্ডের কাছে মনির গাজীর বড় সাইজের ডোবা সাদৃশ্য পুকুরটির চারপাশ বাঁশের চাটাই ও মশারীর জাল দিয়ে ঘেরা। মাঝ বরাবর চাটাইয়ের বেড়া ও মশারীর জাল পুকুরকে দুইভাগে ভাগ করেছে। এ এলাকায় সাধারণতঃ মাছ চাষের জলাশয়ে এত সুরক্ষা দেখা যায় না। সবুজ নামের এক কর্মী পুকুরে নেমে হাতরিয়ে বড় বড় সাইজের কাঁকড়া তুলে আনছে। ওই যুবকটি জানাল, এখানে ছোট ছোট কাঁকড়া নাসিং (পরিচর্যা/মোটাতাজাকরণ) করে বড় করা হয়। কাঁকড়া জন্য খুব বেশি পরিচর্যা দরকার পড়ে না। নিয়মিত খাবার দিলেই চলে। তবে পুকুর পাড়ে শক্ত ও ভাল বেড়ার দরকার পড়ে। না হলে কাঁকড়াগুলো হেঁটে হে*টেই চলে যাবে। এখানকার কাঁকড়া খুলনা ও বাগেরহাটে চালান করা হয়।

ঘেরের পাশেই মনির গাজীর মাছের আড়ত। গত ১২ বছর ধরে তিনি গলদা ও বাগদা চিংড়িসহ বিভিন্ন সাদা মাছের (রুই, কাতলা, কোরাল, বোয়াল প্রভৃতি) আড়তদারী করছেন। বছর পাঁচেক আগে এলাকার প্রথম ব্যক্তি হিসেবে কাঁকড়া রফতানি শুরু করেন মনির। স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে কাঁকড়া কিনে তা খুলনা, বাগেরহাট এলাকায় চালান করতেন।

 

জেলেদের জালে ধরা কাঁকড়াগুলো আড়তে আসতে আসতেই দুর্বল হয়ে পড়ত। কাঁকড়াগুলোকে খুলনা পাঠানোর সময়ে অর্ধেকই মারা পড়ত। সেসময় থেকেই মনির ভাবতে শুরু করলেন কীভাবে তরতাজা কাঁকড়া চালানে পাঠানো যায়। সে ভাবনা থেকেই গত বছর তিনি কাঁকড়া নাসিং (পরিচর্যা/মোটাতাজাকরণ) শুরু করেন। মনির জানালেন, ‘চালানে পাঠালে এখনও কাঁকড়া মারা পড়ে। তবে খুবই কম পরিমাণে।’ মনির গাজীর সাফল্য দেখে ওই এলাকার শতাধিক উদ্যোগী মানুষ কাঁকড়া চাষ শুরু করেছেন।

 

জেলার পাথরঘাটায় প্রায় তিন একর জায়গা ইজারা নিয়ে কাঁকড়ার ঘের করেছেন বরিশালের রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, স্থানীয় জেলেদের কাছ থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করে ঘেরে তা বড় করা হয়। বাজার থেকে ছোট ও গুড়া মাছ কিনে কাঁকড়াকে খাওয়ানো হয়। ৪১ দিন পড়ে ওই কাঁকড়াগুলো প্রায় ৭শ’ থেকে ৮শ’ গ্রাম ওজনের হয়। বার মাস চলে কাঁকড়ার ব্যবসা। প্রতি দেড় মাসে ৫০ হাজার টাকা মূলধনে ১ লাখের বেশি টাকা আসে বলে তিনি জানান। খুলনাসহ বিভিন্ন মোকামে প্রতিকেজি কাঁকড়া বিক্রি হয় ৭শ’ থেকে ১২শ’ টাকায়।

 

জেলা মৎস্য দফতরের কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকা হিসেবে বরগুনাতে কাঁকড়া মোটাতাজা করণ (নাসির্ং) ও প্রজননের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। ভাদ্র থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত জেলেদের জালে প্রচুর কাঁকড়ার বাচ্চা ধরা পড়ে এবং অহেতুক মারা পড়ে। সেগুলোকে মোটতাজাকরণের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ উপার্জন সম্ভব। জেলা মৎস্য বিভাগ কাঁকড়া চাষে উদ্যোগীদের প্রশিক্ষণসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’