ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
ব্যবসা ও শিল্প
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের আয়ের উৎস বুটিক হাউস

সাইফুল ইসলাম জুয়েল

 

সৃজনশীল কাজে আপনার আগ্রহ থাকলে আপনার বেকার বসে থাকার সুযোগ নেই। বুটিক ব্যবসায় আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেই হয়ে উঠতে পারেন স্বাবলম্বী। অনেকেই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এ পেশা বেছে নিচ্ছেন এবং লাভবানও হচ্ছেন। ব্যবসায়িক বুদ্ধি, রুচিবোধ, গ্রাহকের মানসিকতা, সৃজনশীলতা থাকলে আপনিও হতে পারেন একটি বুটিক হাউসের কর্ণধার।


প্রাথমিক প্রস্তুতি
যে কোন কাজ শুরুর আগে সে কাজ সম্পর্কে ভাল ধারণা নেয়া উচিত। এটা কাজের প্রাথমিক ধাপ। দোকানের অবস্থান, আপনার কাজের স্বকীয়তা এবং বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে আপনার বুটিক হাউসের ব্যবসায় নামা উচিত। সবচেয়ে ভাল হয় এ পেশায় অভিজ্ঞ এমন কারও থেকে পরামর্শ ও প্রাথমিক ধারণা নিতে পারলে। তাছাড়া ইন্টারনেট ও পত্রিকায়ও এ সম্পর্কিত আরও বিস্তারিত তথ্য পেতে পারেন। 
ব্যবসা শুরু করতে কী কী লাগবে তার একটা তালিকা শুরুতেই তৈরি করে নেয়া ভাল। এতে আপনি মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়েই কাজে নামতে পারবেন। কত টাকা লগবে, কোথায় ব্যবসাটি ভাল লাভজনক হবে, কোন ধরনের পোশাক তৈরি করবেন, আয়-ব্যয় কেমন হবে, কাদের মাধ্যমে বিক্রি করবেন, কাপড় বা পোশাকে ব্যবহৃত পণ্যগুলো কোথায় পাওয়া যেতে পারে ইত্যাদি জেনে এবং প্রয়োজনীয় ঠিকানা ও ফোন নম্বর যোগাড় করে তবেই বুটিক ব্যবসায় নামা উচিত।

 


যেভাবে শুরু করবেন
প্রথমেই বড় পরিসরে কাজ শুরু না করাই ভাল। কেননা, অনেক সময়ই দেখা যায় ভাল অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় সঠিক স্থান নির্বাচন করতে না পারার কারণে ব্যবসায় লোকসানের মুখোমুখি হতে হয়। পুঁজি কম হলে কয়েক মাস নিজ বাড়িতেই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। ঈদ, নববর্ষসহ বিভিন্ন উৎসবে, যখন প্রায় সবাই নতুন পোশাক কিনেন, তখন প্রদর্শনীর মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। আনুমানিক ১০-২০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া দিয়েই একটি ভাল শো-রুম নিতে পারেন। তবে টাকার পরিমাণ দোকানের অবস্থান, আকার, চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কম-বেশি হতে পারে।


স্থান নির্বাচন
বুটিক হাউসগুলো সাধারণত একই স্থানে গড়ে ওঠে। কারণ সেখানে গেলে একসঙ্গে অনেক দোকান বা মার্কেট ঘুরে দেখে কাপড় কেনা যায়। সে কারণে ক্রেতারাও সেখানেই বেশি যায়। একটি মাত্র দোকান দেখে মানুষ সচরাচর সেখানে যেতে চায় না। তাই স্থান নির্বাচনে সতর্ক থাকুন।


প্রয়োজনীয় উপকরণ
বুটিকের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো হলোÑ টেইলারিং মেশিন, কাঠের ডাইস রং, বিভিন্ন রংয়ের সুতা, সুই ও সবশেষে কাপড়। আরও লাগবে কর্মী যারা মেশিনে কাপড় তৈরি ও সেগুলো বাজারজাত করবেন। প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো কিনতে ৫-৮ হাজার টাকা হলেই চলে। গাউছিয়া, চাঁদনি চক, চকবাজার, নিউমার্কেটে এসব উপকরণ পাওয়া যায়। কেনার সময় সঙ্গে অভিজ্ঞ লোক থাকলে ভাল হয়।


বাজারজাত করণ

দেশ-বিদেশে বুটিক হাউসের পোশাকের ভাল চাহিদা আছে। সবাইকে জানিয়েই ব্যবসায় নামা ভাল। ক্রেতাদের সন্তুষ্টি এবং ধারাবাহিকতা বঝায় রাখতে পারলে পোশাক ভাল চলবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটি হলো- কম দাম ভাল ও আধুনিক মানের পোশাক সরবরাহের লক্ষ্য থাকলে ব্যবসার সুনাম বাড়বে এবং দিন দিন এটি সম্প্রসারিতও হবে।


পোশাকের ধরন
পোশাকে অবশ্যই স্বকীয়তা থাকতে হবে। সুতি, খাদি, সিল্ক ইত্যাদি কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া বাজারে কাপড়ের চাহিদার ওপরে ভিত্তি করে কাপড় নির্বাচন করুন। বুনন পর্যায়ে নিজের নকশা ব্যবহার করলে টাঙ্গাইল, নরসিংদী, সিরাজগঞ্জ, পাবনাসহ বিভিন্ন এলাকার একেক বিষয়ে অভিজ্ঞ তাঁতিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন। ধীরে ধীরে আপনি নিজেই কাপড় কাটা, সেলাই, এ্যাম্ব্রয়ডরি, ব্লক প্রিন্ট, জরি, চুমকি-পুঁতির কারখানা গড়ে তুলতে পারলে ব্যবসার জন্য ভাল হবে। 


বৈধতার কাগজপত্র
ব্যবসা শুরুর আগে অবশ্যই নিকটস্থ পৌরসভা কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ অফিস থেকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি এর বিনিময়ে ট্রেড লাইসেন্স করিয়ে নিন। এ জন্য আপনার নিজের জায়গার দলিলপত্র কিংবা ভাড়া হলে তার চুক্তিপত্র এবং পাসপোর্ট সাইজের চার কপি ছবি জমা দিতে হবে।


প্রচারণাই ব্যবসার পরিধি বাড়ায়
ব্যবসা শুরু আগে প্রচারণা চালালে মানুষ আগুহী হয়ে ওঠে। লিফলেট এবং পোস্টারের মাধ্যমে প্রচারণার কাজ শুরু করতে পারেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন এমনকি টিভিতেও বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। স্টেজ শোর মাধ্যমে আপনার পোশাক অন্যের সামনে সহজেই তুলে ধরতে পারেন। প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ওয়েবসাইটও করে নিতে পারেন।


লক্ষ্য রাখুন
ক. এটি একটি সৃজনশীল পেশা। ভাল লাগার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
খ. দোকানের নাম ও লোগোসহ শপিংব্যাগ তৈরি করে নেবেন।
গ. ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আপনার দোকানের নাম এবং লোগো বাছাই করুন। 
ঘ. ক্রেতাদের সহজ যোগাযোগের জন্য দোকানের সহজ ঠিকানা এবং ফোন নাম্বার দিয়ে দেবেন। 
ঙ. মানুষের ফ্যাশন ও রুচির পরিবর্তন হতে পারে। সে অনুযায়ী আপনার পোশাকের নতুনত্ব আনার চেষ্টা করুন। 
চ. ভাল মানের কারিগর সংগ্রহ করুন।
ছ. প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং কাঁচামাল সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা অত্যাবশ্যক। 


প্রশিক্ষণ
বুটিক হাউস তৈরি বা এ ব্যবসা শুরুর পূর্বে প্রশিক্ষণ নেয়া ব্যবসায় সফলতার মূলমন্ত্র। বেশ কয়েকটি সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। ১০০০-৫০০০ টাকার বিনিময়ে এসব প্রতিষ্ঠানে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। 
বিসিক : এই প্রতিষ্ঠানে ব্লকে বিভিন্ন নকশা তৈরির কাজ শেখানো হয়। কোর্স ফি ২৫০০ টাকা, বাটিক কোর্স ফি ২৯৫০ টাকা।
যোগাযোগ : বিসিক নকশা কেন্দ্র, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন, ১৩৭-১৩৮, মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা- ১০০০। ফোন- ৯৫৫৩১১২
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি : এখানে ব্লক প্রিন্ট, টাইডাই, হ্যান্ডিক্রাফট, সেলাই, কাটিং, মেশিন এ্যাম্ব্রয়ডারি ইত্যাদি শেখানো হয়। কোর্স ফি ৫০০ টাকা।
যোগাযোগ : বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, ৪, নাটক সরণি, বেইলী রোড, ঢাকা। ফোন- ৯৩৩৭০৫০
প্রতিবেশ ট্রেনিং সেন্টার : এখানে ১৫ দিন এবং ৩০ দিন মেয়াদী দুটি কোর্সে বুটিক কোর্স শেখানো হয়। এ জন্য যথাক্রমে ৩০০ এবং ৫০০ টাকা কোর্স ফি লাগবে। পাশাপাশি ইলেকট্রিক এ্যাম্ব্রয়ডরি এবং নরমাল এ্যাম্ব্রয়ডারির কাজও শেখানো হয়। 
যোগযোগ : প্রতিবেশী ট্রেনিং সেন্টার, সেকশন-৬, ব্লক-টি, বাড়ি-২, রোড-৩৫, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬। ফোন- ৮০৫৯৭৬১, ০১৭১১৯৪৫৬২০
ঘরকন্যা : এখানে এক হাজার টাকায় সেলাইয়ের কাজ শেখানো হয় এবং রঙের কাজের জন্য চার হাজার টাকা ফি নেয়া হয়।
যোগাযোগ : ঘরকন্যা, ৬৯, ডলফিন গলি, কলাবাগান, ঢাকা। ফোন: ৮১২২৮৫৬, ৯১২১৬৪৯


ব্যর্থতা কাটাতে 

ব্যর্থতা মেনে নেয়া সহজ নয়। বিশেষ করে অনেক পরিশ্রমের পরও যদি কাক্সিক্ষত সাফল্য না আসে, হতাশা তো আসবেই। ব্যর্থতা মানে সব কিছু থমকে যাওয়া। কিন্তু মনে রাখবেন এটাই শেষ নয়। ধৈর্য এবং চেষ্টা থাকলে সাফল্য আসতে বাধ্য। ব্যর্থতা সামলানোর বিশেষ কিছু পরামর্শ থাকল এখানে। ব্যর্থতার পর মন খারাপের জের বেশ কিছুদিন ধরে চলতে পারে। নিজেকে বার বার দোষারোপ করবেন না। যা হয়েছে ভুলে গিয়ে নতুনভাবে সব কিছু শুরু করুন। এই দিনগুলোয় নিজেকে একটু বেশি সময় দিন। দরকার হলে ভিড়ভাট্টা থেকে সরে গিয়ে একা সময় কাটান বা ছেলেবেলার বন্ধুর সঙ্গে ফোনে গল্প করুন। বই পড়া, গান শোনা বা নিজের ব্যক্তিগত কোন শখ নিয়ে সময় কাটালেও মন ভাল রাখবে। তবে মন ভাল না থাকলেও নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া, ঘুম, এক্সারসাইজ, কোনটাই বাদ দেবেন না। মনোসংযোগের জন্য মেডিটেশনও করতে পারেন। 
প্রথমেই ব্যর্থতার চুলচেরা হিসেবে বসে না গিয়ে নিজেকে কিছুটা সময় দিন। রাগ, ফ্রাস্ট্রেশন, দুঃখ, হতাশা- যে ধরনের অনুভূতিই মনে আনাগোনা করুক, তা চেপে রাখবেন না। কিছুটা সময় এই অনুভূতির সঙ্গে তোকাবিলা করলে, আস্তে আস্তে মনে জোর ফিরে পাবেন। ঠা-া মাথায় ভাবুন আপনি ঠিক কোথায় ভুল করেছেন। সেই সঙ্গে কী করলে উন্নতি হবে সেই প্লানিংও করে ফেলুন। পুরো ঘটনাটা ডায়েরিতে লিখে ফেলুন। কোন কথাই গোপন রাখবেন না। পুরো ব্যাপারটা লিখে ফেলার পর মন একটু হালকা হবে। তার চেয়েও বড় ব্যাপার হলো, যে বেশ কিছুদিন কেটে যাবার পর ডায়েরি পড়লে পুরো ব্যাপারটা একটু নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পাবেন। কোথায় ভুল হয়েছে, কে দায়ী, কোন কর্মপদ্ধতি মেনে চলায় সমস্যা হয়েছে ইত্যাদি খুঁটিনাটি অনেক স্বচ্ছভাবে বুঝতে পারবেন। 


কাজের পরিবেশে ফিরে আসার কিছুদিন পর নিজের ভুলগুলো পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করুন। আপনার টিমের অন্যান্য সদস্য এবং অভিজ্ঞ কর্মচারীদের সঙ্গে মিটিং করেও ব্যাপারটা নিয়ে পর্যালোচনা করতে পারেন। নিজের দোষত্রুটিগুলো স্বীকার করে নিন। আর কোথায় কী ভুল হয়েছে সেটাও ভাল করে বুঝে নিন। খেয়াল রাখবেন মিটিংয়ে যেন একে অপরকে দোষারোপ করা না হয়। পারস্পরিক দোষারোপ করলে টিমের একতা আরও খানিকটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 
পুরনো ব্যর্থতা থেকে যে শিক্ষাটা পেয়েছিলেন, তা ভুলে না গিয়ে ভবিষ্যতে কাজে লাগান। নিজের ব্যক্তিগত ডায়েরিতে জরুরী তথ্যগুলো টুকে রাখুন। নতুন কাজে হাত দেয়ার আগে সেই পয়েন্টগুলো ঝালিয়ে নিন। কাজের প্রত্যেক ধাপেই এই ক্রসচেকিং করলে আপনার আরও সুবিধা হবে।



আরও তালিকা এখানে