ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
মৎস্য চাষ
পুকুরে রুই-কাতলার পাশাপাশি গলদা চিংড়ি

স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ির চাষ ভালো হয়। পুকুরে রুই-কাতলা মাছের সঙ্গেও গলদা চিংড়ি চাষ করা যায়। চিংড়ি সাধারণত পুকুরের তলায় যেসব খাদ্য পায় তাই খেয়ে থাকে। চিংড়ি চাষের পুকুরে অধিক অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় বলে মাঝেমধ্যে পুকুরের পানি পরিবর্তন করতে হয়। তাই সাধারণত যেখানে নদী, খাল-বিল, ঝরনা, গভীর বা অগভীর নলকূপ হতে সহজে প্রয়োজনীয় পানি দেয়া যায়—এ রকম স্থানে পুকুর তৈরি করা উত্তম। এটেল মাটি ও দোঁআশ মাটিতে পুকুর তৈরি করা সুবিধাজনক। কারণ, এ ধরনের মাটির পাড় বা বাঁধ শক্ত ও মজবুত হয় এবং পানি চুঁইয়ে যেতে পারে না। 
পুরাতন পুকুরে চিংড়ি চাষ করতে হলে পুকুরের আবর্জনা, ময়লা, কচুরিপানা, কলমী লতা, হেলেঞ্চা, ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে হবে। পুকুরপাড়, গাছপালা এবং আগাছামুক্ত হলে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ও বাতাস চলাচল অতিপ্রয়োজন। গলদা চিংড়ি চাষের ক্ষেত্রে পুকুরের গভীরতা সাধারণত ১-১.৫ মিটার (৩-৪ ফুট) হওয়া বাঞ্ছনীয়। পুকুরপাড় এমনভাবে উঁচু করতে হবে যাতে পানি গড়িয়ে পুকুরে না আসতে পারে। কারণ, বৃষ্টির পানি গড়িয়ে এলে পুকুরের পানি ঘোলা হয়ে পানির ভেতরে সূর্যের আলো প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করে, এতে পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হবে না। যে কোনো আকারের (সর্বনিম্ন ১০ শতাংশ) পুকুরে চিংড়ি চাষ করা যায়। তবে ব্যবস্থাপনা সুবিধার জন্য আয়তকার পুকুরে চিংড়ি চাষ করা উত্তম।
পুকুর প্রস্তুতি
ক. চাষের শুরুতেই তৈরি করে নিতে হয়। পুকুর তৈরি করতে হলে প্রথমেই পুকুর শুকিয়ে ফেলতে হবে। পুকুর শুকালে রাক্ষুসে মাছ দূর হবে। তাছাড়া পুকুরের তলদেশে জমে থাকা ক্ষতিকর বিষাক্ত গ্যাস বের হয়ে যাবে। পুকুর শুকালে পুকুরের তলদেশে সূর্যের আলো পড়বে। পুকুর শুকানো না গেলে প্রতি ঘনমিটার পানিতে ৩ গ্রাম হারে রোটেনন পাউডার পানিতে গুলে তা পুকুরের সব অংশে ছিটিয়ে দিতে হবে। রোটেনন ব্যবহারের আগে পানি কমিয়ে নিলে রোটেননের পরিমাণও আনুপাতিক হারে কম লাগবে। 
খ. মাটির প্রকারভেদে চুন প্রয়োগের মাত্রা কম-বেশি হয়। নতুন পুকুর বা অম্লীয় মাটিযুক্ত (লাল মাটি) পুকুরে চুনের মাত্রা বেশি প্রয়োজন হয়। সাধারণত পুকুরে শতাংশপ্রতি ১ কেজি হারে পাথুরে চুন পানিতে গুলে ছিটিয়ে দিতে হয়।
গ. পুকুরে চুন দেয়ার ৬-৭ দিন পর শতাংশপ্রতি ৫-৭ কেজি পচানো গোবর বা ৩-৪ কেজি মুরগির বিষ্ঠা, ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ইউরিয়া, ৫০-৭৫ গ্রাম টিএসপি এবং ২০ গ্রাম এমপি সরবরাহ করতে হয়। পুকুরে সার দেয়ার পর অল্প পরিমাণ পানি সরবরাহ করলে তাতে সার পচে ক্ষতিকর গ্যাস বের হয়ে যাবে এবং মাছের খাদ্য তৈরিতে প্রয়োজনীয় উপাদান বের হয়ে আসবে। এভাবে সার পচানোর পর পানির গভীরতা বাড়িয়ে ১-১.৫ মিটার (৩-৪ ফুট) করা যেতে পারে।
ঘ. পুকুরে সার দেয়ার ৭-৮ দিন পর চিংড়ির পোনা মজুদ করতে হবে। পুকুরের মাটির উর্বরতা, পানির গুণাগুণ সম্পূরক খাদ্য ও পুকুর ব্যবস্থাপনার সুযোগ-সুবিধার ওপর পোনা মজুদের হার নির্ভরশীল। পুকুরে এককভাবে গলদা চিংড়ির চাষে সাধারণত একরে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজারটি পোনা ছাড়া যাবে। যেসব পুকুরে উত্তম পানি ব্যবস্থাপনার সুযোগসহ উন্নতমানের খাবার ব্যবহার করা হবে, সেখানে আরও অধিক হারে চিংড়ির পোনা মজুদ করা যাবে। তা ছাড়া পুকুরের পানির পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য শতাংশে ৫টি সিলভার কার্প ও ৫টি কাতলার পোনা মজুদ করলে ভালো হয়।
সম্পূরক খাবার সরবরাহ : চাষের জন্য পুকুরে যে কম্পোষ্ট সার প্রয়োগ করা হয় তা থেকে উত্পন্ন খাবার মাছের মতো চিংড়িও খেয়ে থাকে। তবে এদের বৃদ্ধির জন্য আলাদাভাবে তৈরি খাবার দিলে খুবই সুফল পাওয়া যায়। নিম্নলিখিত উপাদান দিয়ে চিংড়ির সুষম সম্পূরক খাদ্য তৈরি করা যায়। যেমন—১. চালের কুঁড়া/গমের ভুসি, ২. খৈল (সরিষা/সয়াবিন/তিল/তিষি), ৩. ফিস মিল, ৪. শামুক-ঝিনুকের খোলসের গুঁড়া, ৫. লবণ, ৬. ভিটামিন মিশ্রণ।
খাদ্য ব্যবহারের পরিমাণ : পুকুরে মজুদকৃত চিংড়িকে দৈনিক ২ বার (সূর্যোদয়ের পর ও সূর্যাস্তের আগে) তাদের ওজনের শতকরা ৩-৫ ভাগ হারে খাবার দেয়াই যথেষ্ট।
সার ব্যবহার : পুকুরে সম্পূরক খাদ্য সরবরাহের পাশাপাশি সার দেয়া প্রয়োজন। রুই জাতীয় মাছ চাষের মতো একই নিয়মে পুকুরে সার ব্যবহার করতে হয়। একর প্রতি বছরে ১০০-১৫০ কেজি ইউরিয়া, ৫০-৭০ কেজি টিএসপি এবং ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কেজি গোবর ব্যবহার করতে হয়। এসব সার মাসিক ভাগ করে কিস্তিতে দুই সপ্তাহ পরপর পুকুরে সরবরাহ করতে হয়। শীতকালে সার দেয়ার প্রয়োজন নেই। পুকুরে সার প্রয়োগের মাত্রা, মাটির উর্বরতা শক্তি, পুকুরের জৈব অবস্থা ইত্যাদি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই সার ব্যবহারের হার অবস্থাভেদে পরিবর্তনশীল। পুকুরে অতিরিক্ত প্লাঙ্কটন জন্মালে সার ও খাবার সরবরাহ বন্ধ রাখতে হবে। চিংড়ির খোলস পাল্টানোর সময় অন্য কোনো প্রাণী কর্তৃক আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ জন্য পুকুরে কিছু পাতাবিহীন ডালপালা এবং বাঁশ পুঁতে দেয়া প্রয়োজন। এতে চিংড়ি আশ্রয় নিতে পারবে।
চিংড়ি ধরা ও বাজারজাতকরণ : চিংড়ি ৬-৭ মাসের মধ্যে বাজারজাতকরণের উপযুক্ত হয়। এ সময় ১৫-২০টিতে ১ কেজি ওজনের হলে চিংড়ি ধরে বাজারজাত করা যায়। বড় ফাঁস জাল ব্যবহার করে শুধু বড় আকৃতির চিংড়ি ধরে ফেলতে হয়। ছোট চিংড়ি কিছু দিন রেখে বাজারজাত করার উপযুক্ত হলে পুকুর শুকিয়ে সব চিংড়ি ধরে ফেলতে হয়।