ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
মৎস্য চাষ
ঝিনুকে পাঁচ মাসে মুক্তা

প্রাচীনকাল থেকেই দেশের সব জায়গায় কম-বেশি মিঠাপানির ঝিনুক থেকে মুক্তা সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। বঙ্গোপসাগর প্রাকৃতিক মুক্তার আবাসস্থল। বাংলাদেশের মহেশখালী ছিল পিংক পার্ল’ বা গোলাপী মুক্তার জন্য জগদ্বিখ্যাত। বাংলাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য পুকুর-দীঘিখাল-বিলহাওর-বাঁওড়। এসব জলাশয় মুক্তা বহনকারী ঝিনুকে পরিপূর্ণ। তবে গুণগত উত্কর্ষতাসম্পন্ন গোলাপী মুক্তা বৃহত্তর ঢাকামুন্সীগঞ্জময়মনসিংহটাঙ্গাইলকিশোরগঞ্জসিলেট,রাজশাহীবগুড়াফরিদপুর ও চট্টগ্রামে বেশি পাওয়া যায়।  দেশের পুকুর-দীঘিখাল-বিলহাওর-বাঁওড়নদী-নালা ও জলাশয়ে মাছের সাথে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করে প্রতি একরে ৪০ লাখ টাকা অতিরিক্ত আয় করা সম্ভব বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মাত্স্য গবেষণা ইন্সটিটিউটের বিজ্ঞানীরা। 

ইতোমধ্যে তারা ময়মনসিংহের স্বাদুপানি কেন্দ্রের পুকুরে স্বল্পসময়ে মিঠাপানির ঝিনুক থেকে মুক্তা উত্পাদনে প্রাথমিক সফল্য অর্জন করেছেন। গবেষণাকালে কৃত্রিম উপায়ে ঝিনুকে পাঁচ মাসে দুই থেকে তিন মিলিমিটার আকারের মুক্তা উত্পাদন করা সম্ভব হয়েছে। এর আগে একই সাইজের মুক্তা উত্পাদন করতে সময় লেগেছিল দেড় থেকে দুই বছর। স্বল্পসময়ে ঝিনুকে মুক্তা উত্পাদন প্রযুক্তি মাঠপর্যায়ে সমপ্রসারণের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে উত্পাদিত মুক্তা বিদেশে রফতানি করে প্রতি বছর ১৫০০ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। একই সাথে এতে ২০ থেকে ৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।  বিএফআরআই ১৯৯৯-০১ সালে ময়মনসিংহের প্রথম গবেষণায় দুতিন মিলিমিটার সাইজের মুক্তা তৈরিতে সময় লেগেছিল দেড় থেকে দুই বছর। এরপর অর্থাভাবে মুক্তা গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ হলেও গত বছর আবার তা শুরু হয়। 

মত্স্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১০-১১ অর্থবছরে একটি কোর’ গবেষণা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। ওই প্রকল্পের অধীনে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে ঝিনুকে মেন্টাল টিস্যু ঢুকিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গভীরতার পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয় এবং নিয়মিত পরিচর্যা করা হয়। এতে পাঁচ মাসেই ঝিনুকে দুই থেকে তিন মিলিমিটার আকারের মুক্তা জন্মেযা রাইস পার্ল’ নামে পরিচিত। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেনবছরব্যাপী চাষ করা হলে মুক্তার আকার আরো বড় করা সম্ভব হবে। গ্রামীণ যেকোনো পরিবেশে বাড়ির আঙিনায় ছোট-বড় পুকুরে মাছের সাথে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে মুক্তা চাষ করা সম্ভব বলে প্রকল্পের প্রধান গবেষক ড. মোহসেনা বেগম তনু জানান। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে,একটি ঝিনুকে ১০ থেকে ১২টি মুক্তা জন্মে। প্রতিটি মুক্তার খুচরামূল্য ৫০ টাকা। প্রতি শতাংশে ৬০ থেকে ১০০টি ঝিনুক চাষ করা যায়। এক হিসাবে দেখা যায়প্রতি শতাংশে ৮০টি ঝিনুকে গড়ে ১০টি করে ৮০০ মুক্তা পাওয়া যায়যার বাজারমূল্য ৪০ হাজার টাকা। সেই হিসাবে প্রতি একরে ৪০ লাখ টাকার মুক্তা উত্পাদন করা সম্ভব। কাজেই মাছের সাথে মুক্তা চাষ খুবই লাভজনক।