ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
ব্যবসা ও শিল্প
কম্পিউটার এন্ড হার্ডওয়্যার

এখন কম্পিউটারে চলছে দুনিয়া। শহর, গ্রাম সর্বত্রই এর সমান কদর। বেচা-বিক্রিও ভালো। নিজ এলাকায়ই দিতে পারেন কম্পিউটার ও কম্পিউটার সামগ্রী বিক্রির দোকান। বিস্তারিত জানাচ্ছেন আল মাসিদ

 কম্পিউটার ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র বিক্রির দোকান দিতে চাইলে হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। পরিচিতি লাগবে এলাকায়।

তবে শুরু হোক
শুরুতে পুঁজি নিয়ে ভাবনা থাকে সবার। তাই স্বল্প পুঁজিতে ব্যবসা করতে হলে দামি কম্পিউটার যন্ত্রাংশ না এনে স্বল্প মূল্যের যন্ত্রপাতি বিক্রি দিয়ে শুরু করা যায়। এ জন্য ছোটখাটো একটি দোকান নিলেই হয়। এ সময় কোনো কর্মচারী না রাখলেও চলে। ব্যবসার শুরুতে খুব কম পণ্য দিয়ে শুরু করলেও ক্ষতি নেই। কারণ প্রথম দিকে সুনাম ও পরিচিতিই প্রধান ব্যাপার। শুরুতে যন্ত্রাংশ কিনতে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পুঁজি লাগবে। অগ্রিম টাকার পরিমাণ দোকানের জায়গার ওপর নির্ভর করবে। এরপর দোকান সাজানোর পালা। সব মিলিয়ে দেড় লাখ টাকা হলেই শুরু করা যায়।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
ব্যবসার জন্য প্রথমেই দরকার হবে ট্রেড লাইসেন্স। এরপর দোকানের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট। ব্যবসার পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টিন সার্টিফিকেটও করাতে হবে। বিভিন্ন কম্পানির ডিলার হতে এই টিন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়।

শোরুম বৃত্তান্ত
শোরুমের জায়গা নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রাথমিকভাবে ১২ ফুট বাই ১২ ফুট জায়গা হলেই শুরু করা যাবে। দোকানের ভেতরে পণ্যের ওজন অনুযায়ী কাচ, কাঠ বা হার্ডবোর্ডের তাক লাগাতে হবে। শোরুমের ওপরের দিকে সুন্দর মডেলের কম্পিউটারের কেসিংগুলো রাখলে ক্রেতা আকৃষ্ট হবেন। সব মিলিয়ে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা হলে মোটামুটি শোরুমের সাজ হয়ে যাবে।

কী কী বিক্রি করবেন
কম্পিউটারের অনুষঙ্গ হিসেবে এলসিডি ও এলইডি মনিটর, ইউপিএস, স্পিকার, কিবোর্ড, মাউস, পেনড্রাইভ, কেসিং, কেব্ল্ আইটেম, মডেম এবং নেটওয়ার্ক আইটেম রাখতে পারেন। আর কেব্লের মধ্যে কানেক্টর, সুইস, রাউটারও রাখতে পারেন। এ ছাড়া হেডফোন, মাদার বোর্ড, প্রসেসর, র‌্যাম, ডিভিডি রাইটার, হার্ডডিস্ক, 'টিভি কার্ড, প্রিন্টার, স্ক্যানারও রাখতে পারেন। প্রথম দিকে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশগুলোর প্রতিটি তিন-চারটি করে রাখতে পারেন।

কোথা থেকে কিনবেন
পাইকারিভাবে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ কিনতে যেতে পারেন ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের হাই ম্যানশন বা মাল্টিপ্ল্যান সেন্টারে। এ ছাড়া আইডিবি ভবনও কম্পিউটার যন্ত্রাংশের বড় বাজার।

দরদাম
কম্পিউটার যন্ত্রাংশের দাম ব্র্যান্ডভেদে কমবেশি হয়। তাই মোটামুটিভাবে এলসিডি ও এলইডি মনিটর পাঁচ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা, ইউপিএস ২৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা, স্পিকার ১৪০০ থেকে ৫০০০ টাকায় কেনা যাবে। আর কিবোর্ড ২০০ থেকে ৮০০ টাকা, মাউস ২০০ থেকে ৮০০ টাকা, পেনড্রাইভ ৫০০ থেকে ২০০০ টাকায় কেনা যাবে। এ ছাড়া কেসিং ১৪০০ থেকে ৫০০০ টাকা, কেব্ল্ আইটেম ২০ থেকে ২০০০ টাকা, মডেম ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা, হেডফোন ১৫০ থেকে ১২০০ টাকা, মাদার বোর্ড, ২০০০ থেকে ৫০০০ টাকা, প্রসেসর ৩০০০ থেকে ৩০০০০ টাকা, র‌্যাম ৩০০ থেকে ৪০০০ টাকা, ডিভিডি রাইটার ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা, হার্ডডিস্ক ১০০০ থেকে ১০০০০ টাকা, টিভি কার্ড ১৬০০ থেকে ৩০০০ টাকা, প্রিন্টার ৩০০০ থেকে দেড় লাখ টাকা, স্ক্যানার ৫০০০ থেকে ১০০০০ টাকার মধ্যে কিনতে পারবেন।

লাভ কেমন
ব্র্যান্ড ও চাহিদার ওপর ভিত্তি করে লাভ কমবেশি হয়। ১০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত লাভ হয়। এলসিডি ও এলইডি মনিটরে লাভ থাকে গড়ে ২০ শতাংশ। এ ছাড়া স্পিকারে ২৫ থেকে ৩০, কিবোর্ডে ২০, মাউসে ২০, পেনড্রাইভে ২০, কেসিংয়ে ২০, কেব্ল্ আইটেমে ১০, মডেমে ১০, নেটওয়ার্ক আইটেমে ২০, হেডফোনে ৩০, মাদার বোর্ডে ২০, প্রসেসরে ২০, র‌্যামে ৩০, ডিভিডি রাইটারে ২০, হার্ডডিস্কে ৪০, টিভি কার্ডে ২৫, প্রিন্টারে ২০ এবং স্ক্যানারে ২০ শতাংশ লাভ থাকে।

চাহিদাসম্পন্ন কিছু ব্র্যান্ড
প্রতিটি পণ্যেরই অনেক ব্র্যান্ড রয়েছে। এর মধ্যে চাহিদাসম্পন্ন ও মানসম্মত কিছু ব্র্যান্ড হলো_ মনিটরের মধ্যে ডেল, স্যামসাং, এইচপি ইত্যাদি। ইউপিএসের মধ্যে পাওয়ার ম্যাড, মার্কারি ও ম্যাটপালো অন্যতম। স্পিকার মাইক্রোল্যাব, ডিলাক্স, ক্রিয়েটিভ এবং মার্কারি বেশি বিক্রি হয়। কিবোর্ড ও মাউসের মধ্যে এফোর টেক, ভেল্যুটপ, ডিলাক্স ও মার্কারির চাহিদা বেশি। পেনড্রাইভের ব্র্যান্ড হিসেবে ট্রানসেন্ড, টুইনমস উল্লেখযোগ্য। ইন্টারনেটের মডেম হিসেবে জুম আলট্রা, গ্রামীণ, বাংলালায়ন ও বোডাফোন অল সিম, কিউবি রাখতে পারেন। তবে মডেম রাখার আগে নিজ এলাকায় সংশ্লিষ্ট কম্পানির নেটওয়ার্ক আছে কি না যাচাই করে নেবেন। প্রিন্টার ও স্ক্যানারের মধ্যে এইচপি, ক্যানন ইত্যাদির চাহিদা বেশি। ব্র্যান্ডভেদে বিভিন্ন যন্ত্রপাতির রয়েছে বিভিন্ন মেয়াদের ওয়ারেন্টি। পেনড্রাইভে লাইফ টাইম, মডেম ও হেডফোনে এক বছর, প্রসেসর ও ডিভিডি রাইটারে এক থেকে তিন বছর, প্রিন্টার, স্ক্যানার, টিভি কার্ড ও হার্ডডিস্কে এক বছর, ল্যাপটপ ও ইউপিএসে এক বছর এবং মনিটরে তিন বছরের ওয়ারেন্টি বেশির ভাগ কম্পানি দিয়ে থাকে।

আনুষঙ্গিক
শোরুমে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ছাড়াও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক পণ্য বিক্রি করতে পারেন। এর মধ্যে মোবাইলের চার্জার, লাইট, চার্জার লাইট, ব্যাটারি, মেমোরি কার্ড অন্যতম। এসব যন্ত্রাংশ পাইকারি দামে পেতে যেতে পারেন গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটে।

কিছু প্রয়োজনীয় কথা
* ব্যবসা শুরুর আগে কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন।
* যন্ত্রাংশ বিক্রির পাশাপাশি মেরামতেরও ব্যবস্থা রাখুন ।
* পরিচিতি বাড়াতে প্রথমে কম লাভে যন্ত্রাংশ বিক্রি করতে পারেন।
* বিক্রির পরিমাণ বেড়ে গেলে পাইকারের কাছ থেকে বাকিতেও যন্ত্রাংশ কিনতে পারবেন।
* পাইকারিভাবে যন্ত্রাংশ কেনার সময় প্রতিটি ভালোভাবে পরীক্ষা করে নেবেন।