ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
মৎস্য চাষ
তেলাপিয়া ও বাংলা মাছের চাষ

 

হাজী বশির আহমদ  
প্রথমেই যে পুকুরে মাছ চাষ করতে চান সেই পুকুরের শোলটাকিবোয়ালবিদেশী মাগুর ধরে ফেলতে হবে। এ ক্ষেত্রে রোটেনন ব্যবহার করা বা পুকুরে সেচ দেয়া যায়। মাছ না থাকা অবস্থায় বা শুকনা পুকুরে প্রতি শতকে দেড় কেজি গরম চুন ছিটিয়ে দিতে হবে। যদি পুকুরে বেশি কাদা থাকে ও পুরনো পুকুর হয় এবং পানি সবুজ গাঢ় থাকে ও পানিতে দুর্গন্ধ হয় তবে সাড়ে তিন ফুট থেকে পাঁচ ফুট পানি থাকা অবস্থায় বা শুকনা পুকুরে দুই কেজি হারে গরম চুন হালকা পাতলা করে ভিজিয়ে পানিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। শতকে এক বা দেড় কেজি হারে লবণ সারের মতো করে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। চার-পাঁচ দিন পর পোনাপ্রতি শতকেতেলাপিয়া মনোসেক্স ২৫০ (৮০০-তে এক কেজি হয় এমন সাইজের)রুই ৫০মৃগেল ৫০বিগহেড ৫০টি অর্থাৎ প্রতি শতাংশে ৪০০টি পোনা ছাড়তে হবে। কারণ তেলাপিয়া ও বাংলা মাছ এক সাইজের থাকলে তেলাপিয়া বাংলা মাছের সাথে খাদ্য নিয়ে ঝগড়া করে। কাজেই ৮০০-তে কেজি হয় এমন ছোট সাইজের তেলাপিয়া দেবেন ও বাংলা মাছ ৩০০-তে কেজি হয় এমন সাইজের দেবেন। মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে বড় পোনা কম মারা যায়। অন্য দিকে ছোট পোনা তুলনামূলভাবে বেশি মারা যায়।

উপরোল্লেখিত মাছ ছাড়া অন্য কোনো মাছ ছাড়া যাবে না। যদি ৫০ শতাংশ পুকুরে সাড়ে তিন থেকে পাঁচ ফুট পানি হয় তবে ২০ হাজার মাছ ছাড়তে পারেন। কত শতক পুকুরে কত হাজার মাছ ছাড়তে হবে ও কত কেজি খাদ্য লাগবে তা আগেই হিসাব করে নেবেন। যদি পোনা তিন হাজার কেজি হয় তবে নার্সিং করে ৩০০টায় আর তেলাপিয়া ৮০০টায় কেজি হওয়ার পর চুন-লবণ দেয়া পুকুরে পাঁচ বা সাত দিন পর পুকুরের পানি পরিষ্কার হলে তবেই পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে।  আর যদি পোনা ১০০০-১৫০০-এ কেজি হয় তবে প্রতি শতকে তেলাপিয়া মনোসেক্স ৩০০ এবং বাংলা ১৫০টি সর্বমোট ৪৫০টি পোনা ছাড়তে হবে।

 

পুকুরে চুন না দিলে পানিতে ক্ষার বেড়ে যায়যার ফলে মাছের চর্ম রোগ দেখা দেবে এবং মাছ মারা যাবে। এখানে মনোসেক্স তেলাপিয়া একটু ছোট সাইজ ও বাংলা মাছ তার চেয়ে একটু বড় সাইজ দিতে হবে। কেননা বাংলা মাছ খাদ্য কম খায় বাড়েও একটু কম। ৫০ শতকে ২০ হাজার মাছের একটা মিশ্র মাছ চাষের গড় খাদ্যের ওজন ও মাছের হিসাব দেয়া হলো। শতাংশে উপরোল্লেখিত ৩০০ ও ৮০০ সাইজের মাছের হিসাব দেয়া হলো। ২০ পার্সেন্ট হারে ৮ কেজি ক্রাম্বল (১) (তেলাপিয়া) রোজ তিনবারে দেবেন। ২০০ ও ৬০০টায় সাইজের পোনার জন্য ১৮ পার্সেন্ট হারে ১০ কেজি ক্রাম্বল (১) এই মিশ্র মাছ চাষে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তেলাপিয়া মাছের এসবি কো: খাদ্যই লাগবে। ১০০টায় কেজি বাংলা মাছ ও ৪০০টায় কেজি তেলাপিয়া ১৬ পার্সেন্ট হারে এসবি তেলাপিয়া ক্রাম্বল (১) ১৭ কেজি। এখন বাংলা মাছ ৫০টায় কেজি হলে ৬,৫০০ মাছ টিকতে পারে ও ১৫০টায় কেজি হলে তেলাপিয়া মাছ ১১,৫০০ টিকতে পারে। খাদ্য লাগবে ১২ পার্সেন্ট হারে ২৪ কেজি। বাংলা মাছ ৪০টায় ১ কেজি হলে ও তেলাপিয়া মাছ ১০০টায় কেজি হলে ১০ পার্সেন্ট হারে খাদ্য লাগবে ২৮ কেজি।

 

বাংলা মাছ ২০টায় কেজি হলে ৬০০০ টিকতে পারে। তেলাপিয়া ৭০টায় কেজি হলে ১১০০০ টিকতে পারে। ৮ পার্সেন্ট হারে খাদ্য লাগবে ৩৭ কেজি তেলাপিয়া ক্রাম্বল (২)। বাংলা মাছ ১০টায় কেজি হলে ৬০০০ টিকতে পারে আর তেলাপিয়া ৫০টায় কেজি হলে ৬ পার্সেন্ট হারে ৫০ কেজি খাদ্য লাগবে (পিলেট ২.৫)। বাংলা মাছ ৫টায় কেজি হলে ও তেলাপিয়া ২০টায় কেজি হলে খাদ্য লাগবে ৪ পার্সেন্ট হারে ৭০ কেজি পিলেট (২.৫ এমএম)। বাংলা মাছ ৩টায় কেজি হলে ও তেলাপিয়া ১০টায় কেজি হলে ৩ পার্সেন্ট এ ৯৩ কেজি তেলাপিয়া ৩.০ এমএম। বাংলা মাছ ২টায় কেজি হলে ও তেলাপিয়া মাছ ৫টায় কেজি হলে খাদ্য লাগবে ২ পার্সেন্ট ১০৪ কেজি ৩.০ এমএম। বাংলা মাছ দেড়টায় ১ কেজি হলে ও তেলাপিয়া ৩টায় ১ কেজি হলে খাদ্য লাগবে ১.৭৫ পার্সেন্ট হারে ১৩৪ কেজি ৩.৫ এমএম। তেলাপিয়া ও বাংলা মাছের প্রচুর অক্সিজেনের দরকার পড়ে। যেমন মাছগুলো একটু বড় হলে বা ঘন হলে কিছু মাছ বিক্রি করে দিতে হবে। তখন অক্সিজেনের ঘাটতিটা একটু কমবে। মাছে যদি কোনো রোগ বালাই না-ও থাকে তারপরও এক মাস পর পর শতাংশে ১ কেজি চুন (১ কেজি চুনে ৩০ লিটার পানি) সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে ও আধা কেজি লবণ সারের মতো ছিটিয়ে দিতে হবে। যদি মাছ ভেসে ভেসে খাবি খায় তখন জরুরি ভিত্তিতে ৫০ শতকে ১০ কেজি জিওলাইট সারের মতো ছিটিয়ে দেবেনপুকুরে পানি বাড়াবেনপুকুরে হররা বা চগম টানবেন ও আপনাকে বুঝতে হবে খাদ্য খেয়ে মাছের যে পায়খানা হয় তা থেকে বিষাক্ত গ্যাস পুকুরের তলায় জমা হয়েছে তখন হররা বা চগম টানতে হবে। যদি সম্ভব না হয় পুকুরে নেমে তলার কাদাগুলো পায়ে নেড়েচেড়ে বিষাক্ত ভুরভুরি গ্যাসগুলো বের করে দিতে হবে। তখন মাছগুলো মরবে না ও ভাসবে না। তারপরও যদি মাছ ভেসে থাকে তবে অক্সিগোল্ড ব্যবহার করতে হবে। ওষুধ দেয়া পানি ছাড়বেন না। ওষুধ দেয়ার আগে পানি পরিবর্তন করবেনতখন চুনলবণওষুধ দেবেন ও পানি বাড়াবেন।

 

পানি পাঁচ ফুট থেকে সাত ফুট রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়। তবে সব সময় খেয়াল রাখবেন তেলাপিয়া মাছের প্রচুর অক্সিজেন প্রয়োজন পড়ে। আপনি যদি খেয়াল না রাখেন হঠাৎ করে একদিন অর্ধেক তেলাপিয়া মরে যাবে। আপনার পুকুরে মাছ অনুমান করা যায় না। যদি ধারণা করা হয় মাছের পরিমাণ কিছু কমে গেছে তবে খাদ্য ও কমিয়ে দিতে হবে। আর যদি দেখা যায় ২ বা ৪টা মাছ দূরে গিয়ে ফুট ছাড়ছে তখন খাদ্য দেয়া বন্ধ করে দিতে হবে। তেলাপিয়া মাছকে কোনো অবস্থায় বেশি খাদ্য দেয়া যাবে না। বেশি খাদ্য দিলে মাছ হবে না। খাবার দিতে হবে খুব ধীরে। যেমন ৫০ কেজি খাদ্য দিতে হবে ১ ঘণ্টায়। যেখানে খাদ্য দিলেন সেখান থেকে ৭-৮ ফুট দূরে খাদ্যের একটা জমাট আইল পড়তে পারে তা হাতিয়ে দেখবেন ও আইল ভেঙে দেবেন। খাবার দেয়া শেষ হলে নির্দিষ্ট স্থানে ১ কেজি খাদ্য দিয়ে ২ মিনিট পর পুকুরে নেমে হাতে নেড়ে দেখতে হবে খাবার আছে কিনা। যদি খাদ্য থাকে খাদ্য কমিয়ে দেবেননা থাকলে খাদ্য একটু বাড়িয়ে দেবেন। এই নিয়মে সাত দিন পর পর খাদ্য পরীক্ষা করবেন। পানির ওপরের স্তরময়লাপুকুর থেকে উঠিয়ে দূরে ফেলে দেবেন। কোনো ক্ষেত্রে মাছ আরো খেতে চাইবে কিন্তু খাদ্য বাড়ানো যাবে না। শীতের দিনে খাদ্য কমাতে হবে। প্রচুর শীত পড়লে খাদ্য মোটামুটি বন্ধ রাখতে হবে বা প্রচুর বৃষ্টি বা জলোচ্ছ্বাস হলে ও মাছ রোগে মরতে শুরু করলে পানি বেশি গাঢ় হলে বা পানিতে পচা গন্ধ হলে খাদ্য দেয়া সাময়িক বন্ধ রাখতে হবে। আর যদি পুকুরে রোগ হয়েই যায় ২-৪টা মাছ মরতে শুরু করে তবে সাড়ে তিন ফুট থেকে ৫ ফুট পানিতে ২০-২৫ গ্রাম পটাশ গুলে পুরো পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে। ২ ঘণ্টা পরে বা আগে টিমশন (প্যাকেটের গায়ে লেখা অনুযায়ী) ব্যবহার করতে হবে।

আরও তালিকা এখানে