ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
কৃষি উদ্যোগ
ড্রাগন ফল চাষ করুন, একর প্রতি বছরে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা আয় করুন।

রুম্পা চক্রবর্তী নামে শৌখিন এক ফলচাষি বাণিজ্যিকভাবে ১০ একর জমিতে ড্রাগন ফলের চাষ করে রীতিমতো হইচই সৃষ্টি করে ফেলেছেন। ঢাকার সাভারে আশুলিয়ার মরিচকাটা গ্রামে ওই ফলচাষি প্রায় সাড়ে ১৬ হাজার গাছ লাগিয়ে এরই মধ্যে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। মাত্র এক বছরের মধ্যে গাছগুলো ফলবতী হয়ে উঠছে। এ বছরই তিনি ৮ থেকে ১০ হাজার ফল পাওয়ার আশা করছেন। ড্রাগন ফলের দেশ হিসেবে পরিচিত থাইল্যান্ডে একটি গাছ পরিপূর্ণ ফলবান হতে সময় লাগে তিন বছর। ২০০৯ সালে থাইল্যান্ড থেকে ড্রাগন ফলের চারা এনে জমিতে লাগানোর মাত্র এক বছরের মধ্যে ফল ধরতে দেখে তিনি নিজেই হতবাক হয়ে যান। তাই তিনি রফতানিযোগ্য এই ফলের ভবিষ্যৎ বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়ে বেশ আশাবাদী। দেশে এখন এই ফলের চারাও পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্রুট জার্ম প্লাজম সেন্টারে। সাভারের জিরানীতেও বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এই ফল। এল আর এগ্রোর স্বত্বাধিকারী লুৎফর রহমানও গড়ে তুলেছেন ড্রাগন ফলের বাগান।
খবরে প্রকাশ, ফটিকছড়ির হালদা ভ্যালি চা বাগানের গাছে গাছে এখন দুলছে লাল টুকটুকে ড্রাগন ফল। এ বছর বেশ ভালো ফলন হয়েছে দুর্লভ ও সুস্বাদু ড্রাগন ফলের। চা উৎপাদনে রেকর্ড সৃষ্টির পাশাপাশি দেশের মাটিতে বিদেশি ফল; ড্রাগন চাষেও সফলতা অর্জন করেছে এ বাগান কর্তৃপক্ষ। এ কারণে রামগড়ের পার্শ্ববর্তী উত্তর ফটিকছড়ির প্রত্যন্ত এলাকার এ চা বাগানটি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। হালদা ভ্যালি চা বাগানের ব্যবস্থাপক জানান, চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রাইম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নাদের খান সম্পূর্ণ শখের বশে এ বিদেশি ফলের চাষের উদ্যোগ নেন। ২০০৪ সালে থাইল্যান্ড সফরকালে তিনি ড্রাগন ফলের ৮০০ চারা গাছ সংগ্রহ করে আনেন। হালদা ভ্যালি চা বাগানের অনাবাদি জায়গায় চারাগুলো রোপণ করা হয়। গাছ লাগানোর ৩-৪ বছর পরই ফুল ও ফল আসতে শুরু করে। প্রথমদিকে ফলন কম হলেও এখন প্রতি বছরই উৎপাদন বাড়ছে।
কাটিং পদ্ধতিতে চারা উৎপাদন করে বাগান সম্প্রসারণ করা হচ্ছে প্রতি বছর। বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ২০০ ফলবান গাছ আছে। এবার গাছের প্রতিটি ডালে ৫০-৬০টি ফল ধরেছে। পাকা ফলগুলোর প্রতিটির ওজন ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম। গত বছর প্রায় ২০০-২৫০ কেজি ফল উৎপাদন হয়। এবার সাড়ে ৩৫০ কেজির মতো ফল হয়েছে। তিনি জানান, এপ্রিল-মে মাসে ফুল আসে। ২০-২৫ দিনে ফুল ফলে পরিণত হয়। অক্টোবর-নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা ও ফল ধরা প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। এ দেশের মাটি ও আবহাওয়া যে ড্রাগন ফল চাষের জন্য উপযোগী তা প্রমাণ করেছে হালদা ভ্যালি চা বাগান। এই ফলের অন্য নাম পিটাইয়া।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাউ জার্ম প্লাজম সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক ড. এমএ রহিম ২০০৭ সালে বাংলাদেশে ড্রাগন ফলের প্রবর্তন করেন। তিনি এ ফলের জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে। সেসব গাছ এখন দিব্যি ফল দিচ্ছে। এরই মধ্যে এ ফলের বাণিজ্যিক চাষের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। এই সফলতার ওপর ভিত্তি করেই জার্ম প্লাজম সেন্টারের পক্ষ থেকে নাটোর, রাজবাড়ী, রাঙ্গামাটিসহ এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রাগন ফলের চাষ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বড়াইগ্রামে হবিদুল ইসলামের বাড়িতে বাংলাদেশে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ উদ্বোধন করেন। তার বাড়িতে ৫টি ড্রাগন ফলের চারা লাগানো হয়। গত বছর তার ওই বাগানের একটি গাছে তিনটি ফল ধরেছে এবং অন্য গাছগুলোতেও ফুল ধরা শুরু করেছে। মাত্র আড়াই বছর পরিচর্যার পর ড্রাগন গাছে ফল ধরাতে ভীষণ খুশি ফলচাষি হবিদুল ইসলাম। এরই মধ্যে আরও অনেকে তার কাছ থেকে চারা নিয়ে লাগানো শুরু করেছেন। পুষ্টিকর ও সুস্বাদু এই ফলের চাষ হলে সবাই উপকৃত হবে এটাই হবিদুল ইসলামের প্রত্যাশা।
গত তিন বছর ধরে ড্রাগন ফলের পরীক্ষামূলক গবেষণায় সফল হয়েছেন রাঙ্গামাটির কাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। তাদের মতে, পাহাড়ের মাটি এই ফল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে ড্রাগন ফলের জন্ম। প্রায় ১০০ বছর আগে ড্রাগন ফলের বীজ নিয়ে আসা হয় ভিয়েতনামে। এরপর থেকে ধীরে ধীরে শুরু হয় ড্রাগন ফলের চাষ।
প্রতি বিঘা জমিতে ২০০টি ড্রাগন ফলের গাছ রোপণ করা যায়। ড্রাগন ফুল নাইট কুইনের মতোই রাতে ফোটে। ফুলের আকার লম্বাটে এবং রং সাদা ও হলুদ। ফুল স্বপরাগায়িত এবং মৌমাছি ও পোকামাকড় পরাগায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। ফুল থেকে ডিম্বাকৃতি ফল উৎপন্ন হয়। ফল হালকা মিষ্টি ও ক্যালরি কম যুক্ত এবং এতে কালোজিরার মতো অসংখ্য বীজ থাকে। একটি গাছ থেকে বছরে ৬০ থেকে ১০০ কেজি ফল পাওয়া যায়। পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের উপদ্রব কম থাকায় এ ফল চাষে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। গাছগুলো প্রায় শতকরা ৫০ ভাগ খাবার বায়ুমন্ডল থেকেই সংগ্রহ করতে পারে এবং বাকি খাবার সংগ্রহ করে জৈব সার থেকে। এজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় এই ফল চাষের ওপর জোর দিচ্ছে।
বাউ ড্রাগন ফল-১ (সাদা) ও বাউ ড্রাগন ফল-২ (লাল)। এ দুটি জাত বাংলাদেশে চাষ করা হচ্ছে। বীজ ও কাটিং পদ্ধতিতে ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। তবে বীজের গাছে মাতৃগাছের মতো ফলের গুণাগুণ না-ও থাকতে পারে। এতে ফল ধরতে বেশি সময় লাগে। ড্রাগন চাষের জন্য কাটিংয়ের চারাই বেশি উপযোগী। কাটিং থেকে উৎপাদিত গাছে ফল ধরতে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে। উপযুক্ত যত্ন নিলে একরপ্রতি ৬ থেকে ৭ টন ফলন পাওয়া যায়। কেজিপ্রতি দাম ২০০ টাকা হলেও, যার বাজর মূল্য ১২ থেকে ১৪ লাখ টাকা। খরচ ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা বাদ দিলেও নিট লাভ হবে ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা।  বর্তমানে ভিয়েতনামে এই ফল বেশি চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনাম ছাড়াও তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, চীন, ইসরাইল, অস্ট্রেলিয়াতেও ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে। ড্রাগন ফল চাষ খুব সহজ। ড্রাগন ফলের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় হলো  জুন-জুলাই মাস। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মে মাস থেকে অক্টোবর মাসে ফল সংগ্রহ করা যায়। শীতকালে এই গাছ ফুল দেয়া বন্ধ করে দেয়। ড্রাগন ফল গাছে পাকা অবস্থায় ৫ থেকে ৭ দিন রেখে দেয়া যায়। আর গাছ থেকে ফল সংগ্রহের পর রাখা যায় প্রায় এক মাস।

প্রায় সব ধরনের উঁচু মাটিতেই ড্রাগন ফলের চাষ করা যায়। বর্তমানে ঢাকার কিছু অভিজাত হোটেলে প্রতি কেজি ড্রাগন ফল ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নাটোরসহ দেশের অন্যান্য স্থানে এর আবাদ হলে দাম কমবে বলে আশা করেন দেশের উদ্যান বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকায় দিন দিন এ ফলের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করা যায়, দুই/এক শতাব্দীর মধ্যেই ইউরোপ-আমেরিকায় ড্রাগন ফল প্রধান ফল হিসেবে আবির্ভূত হবে। সেইসঙ্গে বাংলাদেশও প্রসিদ্ধি লাভ করবে ড্রাগন ফল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে।

ড্রাগন ফলের পুষ্টিমান
ভক্ষণযোগ্য প্রতি ১০০ গ্রামে পাওয়া যায়-         
  • পানি    -        ৮০-৯০ গ্রাম
  • শর্করা   -        ৯-১০ গ্রাম
  • প্রোটিন  -        ০.১৫-০.৫ গ্রাম
  • আঁশ     -        ০.৩৩-০.৯০ গ্রাম
  • খাদ্যশক্তি   -    ৩৫-৫০ কিলোক্যালরি
  • চর্বি      -        ০.১০-০.৬ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম      -        ৬-১০ মি গ্রাম
  • আয়রন -        ০.৩-০.৭ মি.গ্রাম
  • ফসফরাস        -        ১৬-৩৫ গ্রাম
  • ক্যারোটিন       -        (Vitamin A থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন সামান্য
  • ভিটামিন          -        বি-৩ - ০.২ - ০.৪মিগ্রাম


ড্রাগন ফলের গুরুত্ব
১.       ক্যারোটিন সমৃদ্ধ থাকায় সুস্থ চোখের উন্নয়ন করে।
২.       আঁশ বেশি থাকায় হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
৩.       আঁশ শরীরের চর্বি কমায়।
৪.       এর প্রোটিন শরীরের বিপাকীয় কাজে সহায়তা করে।
৫.       ক্যালসিয়াম হাড় শক্ত ও সুস্থ দাঁত তৈরি করে।
৬.       ভিটামিন-বি-১ কার্বহাইড্রেট বিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি উৎপন্ন করে।
৭.       ভিটামিন বি-৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ত্বক মসৃণ রাখে।
৮.       ভিটামিন সি শরীরের কাটা, ভাঙা জোড়া লাগাতে সাহায্য করে।
৯.       ভিটামিন বি-২ শরীরে ক্ষুধা তৃষ্ণা, যৌন বাসনা, প্রভৃতি মিটানোর আকাঙক্ষা উন্নয়ন ও পূরণে সাহায্য করে।
১০.     ফসফরাস বেশি থাকায় কোষ কলা গঠনে সাহায্য করে।


ঔষধি গুণ
রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
তাইওয়ানে ডায়াবেটিসের রোগীরা ভাতের পরিবর্তে এ ফল প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে।
ফলটিতে ফাইটো অ্যালবুমিন, এন্টি অ্যঙিডেন্ট থাকে যা ক্যান্সারের কারণ  ফ্রি রেডিক্যাল তৈরিতে বাধা দেয়।
এ ফল খেলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ক্রনিক আন্ত্রিক সমস্যার সমাধান করে।
লিভারের জন্য খুবই উপযোগী।
গবেষণায় জানা গেছে এ ফল নিয়মিত খেলে ওজন কমে এবং সুন্দর শরীর তৈরি হয়।


রোপণ ও সার ব্যবস্থাপনা 
জমি ভালোভাবে চাষ করে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৩ মিটার দিয়ে হেক্সাগোনাল বা ষড়ভোজী পদ্ধতি ব্যবহার করে এ গাছ লাগানো ভালো। তবে অবস্থা ভেদে দূরত্ব কম বা বেশি দেওয়া যেতে পারে। ড্রাগন ফলের চারা রোপণের জন্য ২০-৩০ দিন আগে প্রতি গর্তে ৪০ কেজি পচা গোবর, ৫০ গ্রাম ই্উরিয়া, টিএসপি ও এমওপি ১শ’ গ্রাম করে এবং জিপসাম, বোরাক্স ও জিংকসালফেট ১০ গ্রাম করে দিয়ে, গর্তের মাটি উপরে-নিচে ভালোভাবে মিশিয়ে রেখে দিতে হবে। ক্যাকটাস গোত্রের গাছ বিধায় বছরের যে কানো সময়ই লাগানো যায় তবে এপ্রিল-সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে লাগানো ভালো। কাটিংকৃত কলম প্রতি গর্তে ৪ থেকে ৫টি করে লাগানো হয়। এক্ষেত্রে যদি ভিয়েতনাম পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাহলে পিলারের চারদিকে কাটিংকৃত কলম চারা লাগিয়ে পিলারের সাথে বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু যদি থাইল্যান্ড ও ফ্লোরিডা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয় তাহলে গর্তে সোজা করে ৪ থেকে ৫টি কলম চারা রোপণ করা হয়। এ গাছ ১.৫-২.৫ মিটার লম্বা হয়। এজন্য এ গাছকে উপরের দিকে ধরে রাখার জন্য সিমেন্টের বা বাঁশের খুটির সাথে উপরের দিকে তুলে দেওয়া হয়। এটি হলো ভিয়েতনাম সিস্টেম। এছাড়া উপরের দিকে ছোট মোটর গাড়ির চাকা বাঁশের চ্যাগারের মধ্যে সেট করে খুব সহজেই এ গাছের শাখাগুলোকে বাড়তে দেওয়া যায় এবং এ সিস্টেমকে বলা হয় শ্রীলংকা সিস্টেম। থাইল্যান্ড ও ফ্লোরিডাতে দুপাশে দুটি খুঁটি পুঁতে মোটা তারের উপরে জাংলার মতো তৈরি করে গাছ জাংলায় তুলে চাষ করা হয়। এ সিস্টেমকে বলা হয় ফ্লোরিডা সিস্টেম। 

বংশবিস্তার 
এ ফলের বংশবিস্তার খুব সহজ। বীজ দিয়েও বংশ বিস্তার করা যায়। তবে এতে ফল ধরতে একটু বেশি সময় লাগে তবে হবহু মাতৃবৈশিষ্ট্য বজায় থাকে না। সেজন্য কাটিং এর মাধ্যমে বংশ বিস্তার করাই ভালো। কাটিং এর সফলতার হার প্রায় শতভাগ এবং তাড়াতাড়ি ধরে। কাটিং থেকে উৎপাদিত একটি গাছে ফল ধরতে ১২-১৮ মাস সময় লাগে। সাধারণত বয়স্ক এবং শক্ত শাখা ১ থেকে ১.৫ ফুট কেটে হালকা ছায়াতে বেলে দোআঁশ মাটিতে গোড়ার দিকের কাটা অংশ পুতে সহজেই চারা উৎপাদন করা যায়। তারপর ২০ থেকে ৩০দিন পরে কাটিং এর গোড়া থেকে শিকড় বেরিয়ে আসবে। তখন এটা মাঠে লাগানোর উপযুক্ত হবে। তবে উপযুক্ত পরিবেশে ও প্রয়োজন অনুযায়ী কাটিংকৃত কলম সরাসরি মূল জমিতে লাগানো যায়।

প্রুনিং ও ট্রেনিং
ড্রাগন ফল খুব দ্রুত বাড়ে এবং মোটা শাখা তৈরি করে। একটি ১ বছরের গাছ ৩০টি পর্যন্ত শাখা তৈরি করতে পারে এবং ৪ বছরের বয়সী একটি ড্রাগন ফলের গাছ ১শ’ ৩০টি পর্যন্ত প্রশাখা তৈরি করতে পারে। তবে শাখা প্রশাখা উৎপাদন উপযুক্ত ট্রেনিং ও ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ১২ থেকে ১৮ মাস পর একটি গাছ ফল ধারণ করে। ফল সংগ্রহের ৪০ থেকে ৫০টি প্রধান শাখায় প্রত্যেকটি ১ বা ২টি সেকেন্ডারি শাখা অনুমোদন করা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে টারসিয়ারী ও কোয়ার্টারনারী প্রশাখাকে অনুমোদন করা হয় না। ট্রেনিং এবং প্রুনিং এর কার্যক্রম দিনের মধ্যে ভাগে করাই ভালো। ট্রেনিং ও প্রুনিং করার পর অবশ্যই যে কোন ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করতে হবে। তানা হলে বিভিন্ন প্রকার রোগবালাই আক্রমণ করতে পারে। 

সেচ নিকাশ
ড্রাগন ফল চাষে পানি খুব কম লাগে। শুকনো মৌসুমে অবশ্যই সেচ ও বর্ষা মৌসুমে নিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। এক্ষেত্রে দু’লাইনের মাঝখানে ৫০ থেকে ১শ’ সেন্টিমিটার আকারে নালা তৈরি করা যায়। এতে করে নালায় ১ বা ২দিন পানি জমা রেখে গাছের মাটিতে রস সরবরাহ করা যায়। তবে মনে রাখতে হবে যে, এ গাছ অতিরিক্ত পানি সহ্য করতে পারে না। পানি ব্যবহারে সতর্ক হতে হবে।

অসময়ে ফল উৎপাদনের কলা কৌশল 
বাউ জার্মপ্লাজম সেন্টারে পরীক্ষামূলক চাষে দেখা গেছে যে ফল আসা শুরু হয় জুন মাসে এবং নভেম্বর মাস পর্যন্ত সংগ্রহ করা যায়। ভিয়েতনামে শীতকালে দিবসের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে প্রতি ৪টি গাছের জন্য একটি করে ৬০ থেকে ১শ’ ওয়াটের বাল্ব সন্ধ্যা থেকে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা জ্বালিয়ে রেখে ফল আনা হচ্ছে। এতে সুবিধা হচ্ছে যে চাহিদা মোতাবেক সময়ে ফল নেওয়া যায়।

রোগ বালাই ও পোকা মাকড়
ফলে রোগ বালাই খুবই একটা চোখে পড়ে না। তাবে কখনো কখনো এ পল গাছে মূলপঁচা, কান্ড ও গোড়া পঁচা রোগ দেখা যায়। মূলপচাঁ: গোড়ায় অতিরিক্ত পানি জমে গেলে মূল পঁচে যায়। এ রোগ হলে মাটির ভিতরে গাছের মূল একটি দুটি করে পঁচতে পঁচতে গাছের সমস্ত মূল পঁচে যায়। গাছকে উপরের দিকে টান দিলে মূল ছাড়া শুধু কান্ড উঠে আসে। তবে এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে উঁচু জমিতে এ ফলের চাষ করা ভালো। এ রোগটি Fusarium sp দ্বারা সংঘটিত হয়। কাণ্ড ও গোড়া পঁচা রোগ: ছত্রাক অথবা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হতে পারে। এ রোগ হলে গাছের কাণ্ডে প্রথমে হলুদ রং এবং পরে কালো রং ধারণ করে এবং পরবর্তীতে ঐ অংশে পঁচন শুরু হয় এবং পঁচার পরিমাণ বাড়তে থাকে। এ রোগ দমনের জন্য যে কোন ছত্রাকনাশক (বেভিস্টিন, রিডোমিল, থিওভিট ইত্যাদি) ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করে সহজেই দমন করা যায়।

পোকা মাকড়
ড্রাগন ফলের জন্য ক্ষতিকর পোকা মাকড় খুব একটা চোখে পড়ে না, তবে মাঝে মাঝে এফিড ও মিলি বাগের আক্রমণ দেখা যায়। এফিডের বাচ্চা ও পূর্ণ বয়স্ক পোকা গাছের কচি শাখা ও পাতার রস চুষে খায়, ফলে আক্রান্ত গাছের কচি শাখা ও ডগার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায় ও গাছ দূর্বল হয়ে পড়ে। এ পোকা ডগার উপর আঠালো রসের মতো মল ত্যাগ করে ফলে শুটিমোল্ড নামক কালো ছত্রাক রোগের সৃষ্টি হয়। এতে গাছের খাদ্য তৈরি ব্যাহত হয়। এতে ফুল ও ফল ধারণ কমে যায়। এ পোাকা দমনে সুমিথিয়ন/ ডেসিস/ ম্যালাথিয়ন এসব কীটনাশক প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২৫ মিলিলিটার বা ৫ কাপ ভালো ভাবে মিশিয়ে স্প্রে করে সহজেই এ রোগ দমন করা যায়।

ফল সংগ্রহ ফলন

·         ফল যখন সম্পূর্ণ লাল রঙ ধারণ করে তখন সংগ্রহ করতে হবে।
·         ফুল আসার ৩০-৫০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়।
·         বছরে ৫-৬টি পর্যায়ে ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রথমত জুন-অক্টোবর, দ্বিতীয় ডিসেম্বর-জানুয়ারি।
·         প্রতিটি ফলের ওজন ২০০ গ্রাম থেকে ১.২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
·         তিন বছর বয়স্ক একটি বাগান থেকে বছরে ৫-৬ টন/হেক্টর ফলন পাওয়া যায়।

শেষ কথা 
অনেকেই দেশে ড্রাগন ফল নতুন হিসেবে উৎসাহের সাথে আবাদ করছেন বা করতে চাচ্ছেন। নতুন ফলের অনেক কিছু যেমন অজানা আছে তেমনি সমস্যাও থাকতে পারে বেশি। তাই কেউ ড্রাগন ফলে আবাদ করতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারের পরিচালক বিশিষ্ট ফলবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. এম এ রহিমের সাথে যোগাযোগ করে করলে অন্তত ঠকবেন না কম খরচে ভালোভাবে ড্রাগন ফলের চাষ করতে পারবেন। পরিকল্পিতভাবে আমরা আগ্রহীরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করে লাভবান হতে পারি।