ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
কৃষি উদ্যোগ
জীবাণু সারে অধিক ফলন

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। উত্পাদিত ফসলের পরিমাণ ও গুণগতমান নির্ভর করে ফসলি জমির গুণাগুণের উপর। আবার ফসলি জমির গুণাগুণ নির্ভর করে মাটির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক গুণাবলীর উপর। মানুষ ও জীবজন্তু যেমন তাদের বৃদ্ধি, জীবনধারা ও পুষ্টির জন্য খাদ্য গ্রহণ করে, তেমনি উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য খাদ্যের প্রয়োজন। এ সমস্ত পুষ্টি উপাদান যোগাতে সার অন্যতম। যে পদার্থ ফসলের বৃদ্ধি, পুষ্টি, ফলন ও গুণাগুণ বৃদ্ধির জন্য মাটিতে প্রয়োগ করা হয় তাই সার। সার প্রধানত জৈব ও রাসায়নিক দুই ধরনের হয়ে থাকে। এছাড়া আরো এক ধরনের সার হয় যার নাম জীবাণু সার।

জীবাণু সার হল এমন ধরনের সার যে সারের ভেতর প্রচুর বাছাইকৃত ক্ষুদ্র জীবন্ত অণুজীব অবস্থান করে, যাদেরকে খালি চোখে দেখা যায় না। এ সমস্ত ক্ষুদ্র অণুজীব নিজস্ব প্রয়োজনে সাধারণ তাপমাত্রায় ও চাপে বায়ুমণ্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংযোজন করে নিজের প্রয়োজন মেটায়, নিকটবর্তী গাছকে সরবরাহ করে ও মাটিতে এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ফলে গাছ সতেজ সবল হয় ও প্রত্যাশিত বর্ধিত ফলন পাওয়া যায়।

পৃথিবীর বহু উন্নত দেশ যেমন আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, জার্মানিসহ উন্নয়নশীল ও প্রতিবেশী দেশসমূহ যেমন ভারত, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনেও জীবাণু সার শস্য উত্পাদনে ব্যবহার করছে। জীবাণু সারের উত্পাদন ব্যয় কম, ব্যবহার পদ্ধতি সহজ এবং স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক নয়। জীবাণু সারের গুণাগুণগুলো পেতে হলে নির্দিষ্ট ফসলের জন্য নির্দিষ্ট জীবাণু সার ব্যবহার করতে হয়, বীজের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে হয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্যবহার করতে হয়, জীবাণু থাকে এবং জীবিত অবস্থায় মাঠে প্রয়োগ করতে হয়, সাধারণত নাইট্রোজেন সারের অভাব পূরণে বেশি ব্যবহূত হয়। ডাল ও তেল জাতীয় ফসলের জন্য জীবাণু সার অধিক ফলপ্রসূ। এছাড়া জীবাণু সার পরিবেশের উপর কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে না।

কৃষিতে জীবাণু সারের কার্যকারিতা অধিক। তবে ডাল ও তেল জাতীয় শস্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি। জাপানের টয়োটা কোম্পানির এক গবেষণায় দেখা গেছে, নীলাভ সবুজ শৈবাল সালোক সংশ্লেষণ দ্বারা সাধারণ গাছপালার চেয়ে ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি ঈঙ২ শোষণ করে। জীবাণু সার বিশেষ করে সায়ানেব্যাকটেরিয়া মাটির ভৌত গুণাবলী যেমন বুনট, গঠন, এবং পানি ধারণ ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেল। জীবাণু সার অদ্রবণীয় ফসফরাসকে দ্রবণীয় ফসফরাসে পরিণত করে এবং মাটির বাতায়নে সাহায্যে করে। সায়ানেব্যাকটেরিয়া মাটিতে ও পানিতে বায়ুমণ্ডলের মুক্ত নাইট্রোজেন সংবন্ধন করে ওইসব পরিবেশের উর্বরা শক্তি বাড়িয়ে দেয়। ধান গাছের শীষের দৈর্ঘ্য এবং কুশির সংখ্যা বৃদ্ধি করে। ফলশ্রুতিতে জীবাণু সার ব্যবহারে ফসলের ফলন ১৫ থেকে ৫০ ভাগ বেড়ে যায়।