ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
ব্যবসা ও শিল্প
কম খরচে শুঁটকি তৈরির বক্স টানেল

বাংলাদেশে শুঁটকিমাছ জনপ্রিয় সুস্বাদু খাবার। শুঁটকিতে প্রায় ৬০-৬৫ শতাংশ শরীর আমিষ এবং ৭-২০ ভাগ রোগনিরাময়ী স্নেহপদার্থ রয়েছে। সামুদ্রিক মাছের শুঁটকির স্নেহপদার্থ হৃদরোগ উপশমে বিশেষ কার্যকর। 
শুঁটকি তৈরির প্রচলিত পদ্ধতির উন্নয়নের জন্য যন্ত্রপাতিনির্ভর ও ব্যয়বহুল প্রযুক্তির প্রয়োজন নেই। মাছের পরিচর্যার উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসম্মত অবস্থা ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে, সংক্রমণ বা পোকার আক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং প্যাকেজিং পদ্ধতির আধুনিকীকরণের মাধ্যমে অতি সহজেই উন্নতমানের বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরি এবং দীর্ঘ দিন ধরে সংরণ ও বাজারজাতকরণ করা যায়। 

কীটনাশক পরিহার করে অরগানিক শুঁটকি তৈরির জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ ও মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম নওশাদ আলম সহজলভ্য ও সস্তা উপাদান ব্যবহার করে ঝুলন্ত বক্স টানেল তৈরি করেছেন, যা মাঠপর্যায়ে উন্নতমানের নিরাপদ শুঁটকি উৎপাদনে খুব কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
পদ্ধতির উদ্ভাবক অধ্যাপক ড. নওশাদ বলেন, শুঁটকি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের প্রধান সমস্যা হচ্ছে পোকামাকড়ের আক্রমণ। সাধারণত দুই ধরনের পোকা শুঁটকিকে আক্রমণ করেÑ মাছি ও মাছির লার্ভা এবং বিটল বা কাইস্সা পোকা। শুঁটকি তৈরির প্রাথমিক পর্যায়ে আর্দ্রমাছের গায়ে মাছিরা ডিম পাড়ে। মাছ তাড়াতাড়ি না শুকালে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বা শুককীট জন্ম নেয়। এ ছাড়া ঘরের আনাচে-কানাচে, অন্ধকার স্যাঁতসেঁতে জায়গায় বিস্তর দেখা যায় বিটল পোকা। হাজার প্রজাতির বিটলের মধ্যে শুধু ডারমাসটিস বিটলরাই মাছের শুঁটকিকে আক্রমণ করে। 

উভয় ধরনের পোকার আক্রমণে শুঁটকি উৎপাদক ও ব্যবসায়ীরা প্রতি বছরই মারাত্মক তির সম্মুখীন হন। এসব পোকামাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধ করতে অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য উৎপাদিত বেশির ভাগ শুটকিতে বিভিন্ন তিকর ওষুধ ব্যবহার করা হয়। 
আজকাল বাজারে এমন শুঁটকি খুব কমই পাওয়া যাবে যেখানে তিকর ওষুধ মেশানো হয়নি। দীর্ঘ দিন ধরে এসব শুঁটকি খেলে মানুষের কিডনি ও লিভার পুরোপুরি অকেজো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এমনকি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ফলে শুঁটকি তৈরির জন্য আধুনিক ও উন্নত পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।
তাজা মাছ থেকে তৈরি শুঁটকির রঙ হবে চকচকে, দেহ ও পেটের চামড়া হবে উজ্জ্বল বা মসৃণ, সামান্য একটু জিভে ছোঁয়ালে স্বাদহীন বা হালকা লবণাক্ত স্বাদ পাওয়া যাবে। 
শুটকির গন্ধ হবে চমৎকার সুন্দর, আর আকৃতি হবে কুঁচকানো। অর্থাৎ শুকানোর পর কুঁচকে গিয়ে মূল দৈর্ঘ্যরে চেয়ে মাছ ছোট হয়ে যাবে। 

উন্নত মানের শুঁটকি উৎপাদনের জন্য হাতের কাছের জিনিসপত্র দিয়ে স্বল্প ব্যয়বহুল ও সহজে পরিচালনযোগ্য বক্স টানেল তৈরি করে নেয়া যায়। তিন সুতার রড দিয়ে দৈর্ঘ্যে ৪২ ইঞ্চি, প্রস্থে ৩০ ইঞ্চি উচ্চতায় ৩৬ ইঞ্চি আকারের একটি বক্স ফ্রেম তৈরি করতে হবে। শুঁটকি করার জন্য কাঁচা মাছ ঝুলিয়ে দিতে বাক্সটির উপরিতলে ২ সুতার রড লম্বালম্বিভাবে ২ ইঞ্চি পরপর বসিয়ে মাচা তৈরি করা হয়। ওই মাচার নিচে ১২-১৫ ইঞ্চি পরপর একইভাবে আরো দুই-তিনটি মাচা তৈরি করতে হবে। সবার ওপরের মাচাটি টানেলের উপরিতল থেকে এক ইঞ্চি নিচে বসালে মাছ ও মশারি জালের মধ্যে কিছুটা ফাঁক থাকবে। 

শুঁটকিতে মাছি ও কাইস্সা পোকার আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এমন সব বিধিসম্মত ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হয় যাতে পোকারা শুঁটকির সংস্পর্শে আসতে না পারে। 
প্রক্রিয়াজাতকরণকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করলে পোকার আক্রমণ ঘটবে না। 
অত্যন্ত কম খরচে সহজলভ্য জিনিস দিয়ে তৈরি ঝুলন্ত বক্স টানেল ব্যবহার করে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি অনুকরণের মাধ্যমে সহজেই বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরি করা যায়। ।