ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
তথ্যাদি
ই-কমার্স বিজনেস প্ল্যান

ই-কমার্স বাংলাদেশে শিক্ষিত ব্যবসায়ী / ব্যবসা ইচ্ছু মানুষের কাছে পরিচিত নাম। দেশে ছোট বড় মিলিয়ে ২০০ এর চেয়ে বেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এটা খুশির সংবাদ যে এই সেক্টরে অনেকেই আগ্রহী হচ্ছে, আর দুঃখজনক হল যারাই এই সেক্টরে আসছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ই-কমার্স সম্পর্কে কোন জ্ঞান, অভিজ্ঞতা নেই।

 

গত কিছুদিন ধরে পার্শ্ববর্তী কয়েকটা দেশ এবং বাংলাদেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গুলো নিয়ে রিসার্চ করছিলাম। বাংলাদেশের প্রথম সারির (তুলনামূলক স্ট্যান্ডার্ড) কিছু ই-স্টোর নিয়ে একটা লিস্ট করেছি। প্রত্যেকটা স্টোরের ওয়েব, সোশ্যাল মিডিয়া প্রেসেন্স, ইন্টারনেট সার্চ ইঞ্জিন প্রেসেন্স, ব্র্যান্ডিং এবশ সর্বোপরি মার্কেটিং নিয়ে ঘাটাঘাটি করেছি।

 

ই-কমার্সকে এখনও অনেকে মনে করছে “একটা ওয়েব সাইট আর কয়েকশ ডলারের ফেইসবুক এড” কিন্তু ই-কমার্স আসলে পূর্ণাংগ একটা ব্যবসার ইলেক্ট্রনিক রূপ, যেখানে রিমোটলি বিক্রয়যোগ্য পণ্যগুলো নেটওয়ার্ক তথা ইন্টারনেট ব্যবহার করে বিক্রয় করা হয়। এক্ষেত্রে একটা ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠানের জন্য “শো-রুম” হিসেবে কাজ করে। প্রোডাক্ট যতই ভাল থাকুক, শো-রুমের ডেকোরেশন ভাল না লাগলে আমরা ঐ স্টোরে ঢুকি না, এড়িয়ে যাই, তেমনি এক্ষেত্রেও ওয়েব ডিজাইনের ক্ষেত্রে অনেক বেশি নজর রাখতে হবে। এখানে “আপা আসেন, আপা আসেন” বলারও চান্স থাকে না। তাই ওয়েব-স্টোর ইউজার ফ্রেন্ডলি হওয়া অত্যাবশ্যকীয়। Conversion Friendly ওয়েব না হলে সব মার্কেটিং এফোর্টই বৃথা যায়। কিন্তু অধিকাংশ সাইটের ডিজাইন দেখে যা মনে হয়েছে, এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা’র ই-কমার্সের ব্যপারে কোন আইডিয়াই নেই।

ওয়েব বানানোর ক্ষেত্রে মনে রাখার মত কিছু বিষয় হলঃ

# কালার স্কিম যাতে প্রোডাক্টের সামঞ্জস্য রেখে হয়, কঞ্জিউমার টার্গেটেড কালার স্কিমও জরুরি।

# প্রোডাক্ট সাজানোর ক্ষেত্রে ক্যাটেগরির দিকে খেয়াল রাখা, একই ক্যাটাগরির সাব-ক্যাটাগরি করে প্রোডাক্ট সঠিক ক্যাটাগরিতে সাজানোর ব্যবস্থা রাখা।

# সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে ঠিকভাবে সিংক করা।

# রিলেটেড প্রোডাক্ট গুলো অটো অ্যারেঞ্জ হওয়ার ব্যবস্থা রাখা। নেভিগেশন সিম্পল রাখা।

# প্রোডাক্ট আপ্লোডের ক্ষেত্রে হাই রেজুলেশনের ইমেজ আপ্লোড করা

# ডিটেইল্ড প্রোডাক্ট ইনফো দেয়া, তবে হ-য-ব-র-ল না করা, যাতে সহজে কঞ্জিউমার পড়তে পারে।

# সার্চ অপশনের ক্ষেত্রে এডভান্সড সার্চ অপশন রাখা খুব জরুরি।

# যথাসম্ভব সাইট হাল্কা রাখা, সিম্পল রাখা।

# চেক-আউট পেইজে প্রমোশনাল কিছু না রাখা।

# অনেক জরুরি একটা বিষয়, কন্ট্যাক্ট ইনফোটা স্বচ্ছভাবে রাখা, যাতে কঞ্জিউমার কনফিউজড না হয়।

# স্পেশাল ডিস্কাউন্ট ক্লিয়ারলি যাতে দেখা যায়, তবে কোন কাজের মাঝখানে পপ-আপ টাইপের নাহ।

# সাইটে এনালিটিক্যাল সিস্ট্যাম রাখা, যাতে ট্রাফিক, সেলস ইত্যাদি ট্র্যাক করা যায়, কোথা থেকে আসছে।

 

মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে অবস্থা আরও বাজে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ই-কমার্সের জন্য ভাল মার্কেটিং চ্যানেল হল ফেইসবুক। কিন্তু তারপরও বেশিরভাগ ই-কমার্স প্রতিষ্টান এক্ষেত্রে চরম ভুল করছে। মাঝে মাঝে দেখা যায় অনেক ই-কমার্স তাদের ওয়েব থাকা সর্তেও ফেইসবুকে প্রোডাক্ট পোস্ট করে, সাথে পেইজ থেকেই অর্ডার করার প্রসেস বলে দেয়। অর্থাৎ তারা কঞ্জিউমারকে ওয়েবে না এনে পেইজ থেকেই সেল করে দিতে চায়। এক্ষেত্রে হয়ত সাময়িকভাবে উক্ত প্রোডাক্ট সেল হয়, কিন্তু লং টার্ম বিজনেস এসেট তৈরি হয়না। ফেসবুক ইউজ করা দরকার লিড জেনেরেশনের জন্য, যা আগামী ১০-২০ বছর ধরেও প্রফিটে কনভার্ট করা যাবে। অনেকে দেখা যায় ফেসবুকে সপ্তাহে একটা পোস্ট দেয়। আবার অনেকে ২০০ টাকা, ৫০০ টাকার খুচরা ফেসবুক এড বিক্রেতা থেকে এড কিনে তাদের দ্বারা এড দেয়। এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলছি না, তবে এটুকু বলছি, তারা তাদের বিজনেস ইমেজ হাড়াচ্ছেন এসব খুচরা এড দিয়ে। একটা প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং, পটেনশিয়াল কঞ্জিউমার ডেভেলপ করা, লিড-সেল জেনেরেট করা চাট্টিখানি কথা নাহ। এর জন্য অনেক স্ট্রং স্ট্র্যাটেজি দরকার, লং টার্ম প্ল্যান দরকার। আপনি আজ XYZ কারও কাছ থেকে ১০০০ টাকার এড দিলেন, হয়ত সাময়িক কটা সেল হল, কিন্তু লংটার্ম স্ট্র্যাটেজি ছাড়া আপনার ব্যবসা ফেরিওয়ালাদের মতই চলতে থাকবে, কঞ্জিউমার বেইস তৈরি করতে পারবেন নাহ। যেকোন ব্যবসার মতি ই-কমার্সে মার্কেটিং অত্যাবশ্যকীয় একটা বিষয়। আর সেই মার্কেটিং ই করতে দিচ্ছেন নন-স্কিল্ড কিছু মানুষকে।

 

মার্কেটিং এর ক্ষেত্রেঃ

# বুঝতে হবে এই দেশে এটা একটা নিউ ট্রেন্ড, তাই কঞ্জিউমার খোজার চেয়ে কঞ্জিউমার তৈরি করতে হবে বেশি। আর যেহতু ট্রেডিশনাল মার্কেটিং এ কাজ হবে না, তাই এই বিষয় গুলোতে অনেক দিন ধরে কাজ করছে এমন স্কিল্ড কাউকে দায়িত্ব দিন, যে শুধু এড দিবে না, বরং আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য লং-টার্ম মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করবে, সেলস-লিড জেনেরেশন এনশিওর করবে। খরচ যাই হউক, সেটা ঘুরে চলে আসবে।

# প্রতি মাসে একটা ভাল এমাউন্ট মার্কেটিং এর জন্য বরাদ্ধ রাখুন। শিডিউল করে এড, ডে-টু-ডে ম্যানেজমেন্ট করার ব্যবস্থা রাখুন। আপনার প্রতিষ্ঠানের Marketing Consultant এর সাথে সপ্তাহে একবার হলেও কথা বলুন, কিভাবে কি করছে, জানতে চেষ্টা করুন মার্কেটিং করে কতটুকু আগানো যাচ্ছে, যাবে।

# আপনার কোন কঞ্জিউমারের ফীডব্যাক হুবুহু কপি করে, স্ক্রিনশট নিয়ে আপ্লোড করুন পেইজে।

# কঞ্জিউমার কোন কারণে অসন্তুষ্ঠ হলে বিনয়ের সাথে ক্ষমাপ্রার্থনা করুন।

# নিউজলেটার মেইন্টেইন করুন।

# অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম রান করতে পারেন, সেল করে দিতে পারলে পার্সেন্টেইজ কমিশন আকারে।

# মাঝে মাঝেই গিভএওয়ে কন্টেস্ট রাখুন, যেমন বেস্ট ফ্যান, লাকি কাস্টমার।

# আপনার কম্পিটিটর কি করছে সেটা মনিটর করুন, তার চেয়ে এগিয়ে থাকার চেস্টা করুন।

# শুধু প্রোডাক্ট শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়া পেইজকে একঘেয়ে করে না ফেলে ক্রিয়েটিভ হউন, বিভিন্ন ইনফোর্মেটিভ পোস্ট দিন যা আপনার প্রোডাক্টের সাথে যায়। কঞ্জিউমারদের ফটো আপ্লোড দিন, আপনার প্রোদাক্ট হাতে পাওয়ার পর তোলা।

# প্রতি সপ্তাহে আপনার মার্কেটিং চ্যানেল গুলোর আপ-ডাউন রিপোর্ট তৈরি করে তুলনা করুন।