ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
ব্যবসা ও শিল্প
ফেলনা কাগজে ভালো আয়

মুড়ির ঠোঙা, দাওয়াতপত্র বা মিষ্টির প্যাকেট হয়ে অনেক কাগজই আমাদের হাতে আসে প্রতিদিন। কাজ শেষ হলে সেই কাগজ আমরা সাধারণত ছুড়ে ফেলি। অথচ এই কাগজ থেকেই বানানো যায় এমন কিছু, যা বাড়তি আয়ের সুযোগ করে দিতে পারে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন সিদ্ধার্থ সাই

গ্রিটিং কার্ড, গিফট বক্স, গিফট ব্যাগ, ফটোফ্রেম, নোটবুক, পেনহোল্ডার, মিরর, ল্যাম্প স্ট্যান্ড, জুয়েলারি বক্স, নোট প্যাড, স্লিপ প্যাড, স্লিপ বক্স_ এমন অনেক কিছুই তৈরি করা যায় ফেলনা কাগজ দিয়ে। দুই ধরনের কাগজ লাগে এগুলো তৈরি করতে_সিল্ক পেপার ও র‌্যাপিং। এ দুটিই তৈরি হয় পুরনো কাগজ থেকে।

যেভাবে শুরু করবেন
ফেলনা কাগজের সরবরাহ নিশ্চিত করে নিতে হবে প্রথমেই। এরপর লাগবে একটা ঘর। কাচ অথবা লোহার প্লেটও লাগবে। মণ্ড করার জন্য সিমেন্টের হাউস অথবা প্লাস্টিকের বড় গামলার প্রয়োজন হবে। আরো প্রয়োজন হবে ব্লেন্ডার মেশিন। কাগজের মণ্ড ছাঁকার জন্য প্রয়োজন হবে লোহা বা বাঁশের তৈরি ছাঁকনি। এ ছাড়া লাগবে রোলার মেশিন ও রং। তবে সিল্ক কাগজ বানাতে বাড়তি বার্লি ও সিল্ক সুতা লাগবে। কাগজ মসৃণ করার জন্য লাগবে রোলার মেশিন।

পকেটে মানিব্যাগ রাখেন না এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। শুধু টাকা রাখাই নয়, ভিজিটিং কার্ড থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় চিরকুট_অনেক কিছুই মানিব্যাগে রাখা হয়। আর অনেক কাজের কাজি এই মানিব্যাগ তৈরিই হতে পারে আপনার আয়ের পথ। জানাচ্ছেন সিদ্ধার্থ সাই

মানিব্যাগ তৈরির কারখানা দিতে চাইলে খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না। আর প্রশিক্ষণের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন নিজ এলাকার বিসিক অফিসে। এ ছাড়া জিঞ্জিরা, নাখালপাড়া, কামরাঙ্গীরচর, রায়েরবাজার, কোনাপাড়া, যাত্রাবাড়ী ও সায়েদাবাদের বাদল সরদারের গলিতে আছে বেশ কিছু কারখানা। চাইলে সেখানে যোগাযোগ করে দেখে নিতে পারেন তৈরির পদ্ধতিও। তৈরির পদ্ধতি খুব বেশি ঝামেলার না হওয়ায় দু-তিন দিন দেখে নিলেই হবে।

যেভাবে শুরু করবেন
পুঁজি কম হলে নিজে এবং বেশি হলে কর্মচারী নিয়ে শুরু করতে পারেন। এর জন্য ১০-১২ বর্গফুটের ঘর হলেই চলবে।
কাঁচামালের খোঁজে যেতে হবে ঢাকার হাজারীবাগ, বংশাল ও সিদ্দিকবাজারে। এসব জায়গা থেকে চামড়াসহ অন্য সব কিছুই পাবেন।

মানিব্যাগের কারখানা করতে কী কী লাগবে
একটা চামড়া বা রেকসিন সেলাই উপযোগী মেশিন। আর লাগবে একটা প্রেশার ডাইস মেশিন। টেবিল বা পিঁড়ি, কাটিং ছুরি, কাঁচি, লাঠি, হাতুড়ি_এসব যন্ত্রপাতি হলেই চলবে। আর কাঁচামালের মধ্যে লাগবে চামড়া, রেকসিন, রানার, জিপার, সুতা, পেস্টিং সলিউশন, আস্তর, বোতাম, কাপড়, নেট, পেপার ও সেলুলয়েড পেপার।

কিভাবে বানায়
চামড়া কিংবা রেকসিনকে মানিব্যাগের মাপে কাটতে হয়। রেকসিন হলে ভেতরে কাগজ দেওয়া হয়। আর চামড়া হলে এগুলোকে মাপমতো কাটা হয়। এরপর ব্যাগের ওপরের অংশে গরম ডাইসের চাপ দিয়ে বিভিন্ন নামাঙ্কিত ছাপ দেওয়া হয়। ছবি রাখার জন্য পকেটে সেলুলয়েড পেপার দেওয়া হয়। সেলাই মেশিন দিয়ে সেলাইয়ের পর দুই পাশ থেকে টেনে টিপ বোতাম লাগানো হয়। হাতুড়ি দিয়ে বোতাম লাগানো হয়। এ ছাড়া রেকসিন ও চামড়া অথবা কাগজের সঙ্গে জোড়া লাগাতেও আঠা ব্যবহার করা হয়।

কাঁচামালের দাম কেমন
মানিব্যাগ বানাতে সাধারণত ছোটখাটো ও টোটা-ছেঁড়া চামড়া ব্যবহার করা হয়। এগুলোর দামও কম। গরু বা ছাগলের মাথা বা পায়ের দিকের ছোট চামড়াগুলো ২০ থেকে ৩০ টাকা পিস হিসেবে কিনতে পাওয়া যায়। আর ফুট হিসেবে কিনলে পাঁচ থেকে ১০ টাকা ফুট দরে কেনা যাবে। রেকসিনের মানিব্যাগ বানাতে রেকসিন কিনতে পারেন বংশাল থেকে। সোয়া এক গজের রেকসিনের দাম পড়বে ৭০০ টাকা। জিপার কিনতে হবে দুই থেকে আড়াই টাকা গজ দরে। জিপারের রানার পড়বে প্রতিটি ৪৫ পয়সা থেকে শুরু করে এক টাকার মধ্যে। সুতা ৩০ টাকা এক রিল, পেস্টিং সলিউশন তিন লিটারের বোতল ৭০০ টাকা। আস্তর বা পলিশ নিজেই বানিয়ে নিতে হবে। বোতাম এক গ্রুস বা ১৪৪ পিস ১৫০ টাকা। চাইলে পুরনো কাপড় কাজে লাগাতে পারেন, আবার নতুন পলিয়েস্টার কাপড়ও কিনে নিতে পারেন, দাম পড়বে আট থেকে ১০ টাকা গজ। একটা পেপারশিট পড়বে ১০ টাকা। আর নেট পড়বে চার টাকা গজ। সেলুলয়েড পেপার সংগ্রহ করা যাবে সিদ্দিকবাজার থেকে। প্রতিটি পাঁচ টাকা করে। সেলাই মেশিনের দাম পড়বে সাত-আট হাজার টাকা। ডাইস মেশিন ২০ হাজার টাকা। আপনার ডিজাইন ও চাহিদামতো প্রতিবারের ডাইস বানাতে পড়বে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা।

কোথায় কী পাওয়া যাবে
চামড়া কিনতে পারবেন সিদ্দিকবাজার, বংশাল রোড, নাজিমউদ্দিন রোড এবং হাজারীবাগ থেকে। নাজিমউদ্দিন রোড বা বংশাল ঘুরে একটি পুরনো সেলাই মেশিন কিনে নিতে পারেন। তবে নতুন আর পুরনোতে দামের পার্থক্য খুবই কম। তাই নতুনটাই কিনে ফেলুন। প্রেশার ডাইস মেশিন কিনতে পারেন জিঞ্জিরা কিংবা লালবাগ অথবা সিদ্দিকবাজার থেকে।
টেবিল বা পিঁড়ি বানিয়ে নিতে পারেন বাড়ির পাশের কাঠমিস্ত্রির কাছ থেকে। কাটিং ছুরি, কাঁচি কিনতে পারেন চকবাজার অথবা শাহজাহানপুর থেকে।
হাতুড়ি কিনতে যেতে পারেন নবাবপুর অথবা ঠাটারীবাজার। কারওয়ান বাজারেও অনেক কামারের হাতুড়ি ও কাঁচির দোকান আছে।
প্রয়োজনীয় কাঁচামাল লাগবে চামড়া, রেকসিন, রানার, জিপার, সুতা, পেস্টিং সলিউশন, আস্তর, বোতাম, কাপড়, নেট, পেপার ও সেলুলয়েড পেপার। এগুলো একই দোকান থেকে কেনা যাবে। এর জন্য যেতে হবে ঢাকার সিদ্দিকবাজার অথবা বংশালে।

কাজ কেমন পাওয়া যায় বা আয় কেমন
সব মিলিয়ে একটা খাঁটি চামড়ার মানিব্যাগ তৈরিতে খরচ পড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। বিক্রি করা যায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
রেকসিনে বানানো মানিব্যাগগুলো তৈরিতে খরচ পড়ে ২০ থেকে ৫০ টাকা। বিক্রি করা যায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা। সব মিলিয়ে দুজন কর্মচারীসহ সব খরচ মিটিয়ে মাসে ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব।

এসএমই ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ:
৮১৪২৯৮৩, ৯১৪২৯০৭।