ই-সেবা

পছন্দের কিছু লিংক

গুরুত্বপূর্ণ সরকারি লিংকসমূহ

 
 
 
কৃষি উদ্যোগ
পেঁপের চারা রোপণ

পেঁপে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টিকর ফল। কাঁচা পেঁপে উপকারী সবজি। আর পাকা পেঁপে খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। কাঁচা পেঁপেতে ‘পেপাইন’ নামক এক প্রকার জারক রস আছে, যা হজমশক্তি বাড়ায় এবং লিভারকে সতেজ করে। পাকা পেঁপেতে প্রচুর ভিটামিন এ, বি, সি এবং ক্যালসিয়াম, লৌহ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বাংলাদেশে স্বল্পমেয়াদি ফলগুলোর মধ্যে পেঁপের চাষ অত্যন্ত লাভজনক। পেঁপের জন্য পৃথক কোনো বাগান না করেও পুকুর পাড়ে, পথের পাশে ও বাড়ির আশপাশের সামান্য ফাঁকা জমিতেও এর চাষ করে স্বল্পসময়ে অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হওয়া যায়।
উপযোগী জমি ও মাটি : পানি নিষ্কাশনের সুবিধাযুক্ত উঁচু দোআঁশ ও এঁটেল দোআঁশ মাটি পেঁপে চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
জাত নির্বাচন : শাহী পেঁপে, রাঁচি, ওয়াশিংটন, হানিডিউ, ব্লুস্টেম, কাকদাম, সেলো প্রভৃতি।
জমি ও মাদা তৈরি : উপযুক্ত জমি নির্বাচন করে সাধারণত ফাল্গুন-চৈত্র মাসে কয়েক পশলা বৃষ্টি হওয়ার পর ‘জো’ এলে জমিতে দু-তিনটি গভীর চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। তারপর বর্গাকার, আয়তকার বা ষড়ভোজী যেকোনো রোপণ পদ্ধতি অনুসরণ করে জাত ভেদে ২.৫ মিটার দূরত্বে সারি করে সারিতে দুই মিটার পর পর ৬০ী৬০ী৬০ সেন্টিমিটার আকারের গর্ত খনন করতে হবে।
সার প্রয়োগ : চারা রোপণের আগে প্রতি গর্তে ১০ কেজি পচা গোবর, ২৫০ গ্রাম খৈল, ২৫০ গ্রাম টিএসপি ও ১৫০ গ্রাম এমপি সার প্রয়োগ করে সারগুলো গর্তের মাটির সাথে ভালো করে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে। মাদায় সার প্রয়োগের পর পানি দিয়ে মাদা ভিজিয়ে ১০-১৫ দিন রাখার পর চারা রোপণ করা উত্তম। এ সময়ের মধ্যে খৈল পচে যায়।
চারা রোপণ : পেঁপের চারা রোপণের জন্য মার্চ মাস (ফাল্গুন-চৈত্র) সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। সাধারণত ৪০-৫০ দিন বয়সের ১০ সেন্টিমিটার লম্বা চারা রোপণ করা ভালো। চারার বয়স এর চেয়ে বেশি বা কম হলে রোপণের পর মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। প্রতি গর্তে ১৫ সেন্টিমিটার দূরে দূরে তিন-ছয় সে.মি. গভীরে কোনাকুনি ত্রিকোণভাবে তিনটি করে পেঁপে চারা রোপণ করতে হবে। চারা রোপণের সময় ল রাখতে হবে, বীজতলায় চারার গোড়া যতটুকু মাটির নিচে ছিল, ঠিক ততটুকু পর্যন্ত গভীরে যেন চারা রোপণ করা হয়। রোপণের সময় চারার নিচের দিকের ২:১টি বড় বড় পাতা কেটে দেয়া ভালো। এতে চারা মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে। রোপণের পর চারার চার পাশের মাটি হাত দিয়ে আলতোভাবে চেপে দিতে হবে এবং চারার গোড়ার পানি সেচ দিয়ে গর্তের মাটি ভালো করে ভিজিয়ে দিতে হবে। এ ছাড়া চারা গাছে ছায়া দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিত।
অতিরিক্ত গাছ অপসারণ : পেঁপেগাছে যখন ফুল আসে তখন প্রতি গর্তে লাগানো তিনটি গাছের মধ্যে একটি স্ত্রী বা উভয়লিঙ্গ গাছ রেখে বাকি দুটি গাছ তুলে ফেলতে হবে। তবে পরাগায়নের সুবিধার জন্য প্রতি ১০টি স্ত্রী গাছের জন্য একটি করে পুরুষ গাছ রাখা উচিত।
আগাছা পরিষ্কার : জমির আগাছা পরিষ্কার করে ছোট অবস্থায় গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। আগাছা পরিষ্কার ও নিড়ানি দেয়ার সময় ল রাখতে হবে যেন, গাছের শিকড় কেটে না যায়।
পনি সেচ : খরার সময় পানি সেচ দিলে পেঁপের ফলন বৃদ্ধি পায়। শীতকালে ১০-১২ দিন পর এবং গ্রীষ্মকালে ছয়-আট দিন পর পর পানি সেচ দেয়া দরকার। দুই সারির মাঝখানে নালা করে এমনভাবে সেচ দেয়া উচিত, যাতে শিকড় পর্যন্ত পানি পৌঁছে। কিন্তু গোড়া যেন পানিতে ডুবে না যায়। গাছ দাঁড়ানো পানি সহ্য করতে পারে না। তাই সব সময়ই সেচ দেয়ার পর সুষ্ঠুভাবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখতে হবে।